ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোপ ফ্রান্সিসের (যদি তিনি প্রয়াত হন) উত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। পোপ নির্বাচনের জন্য কার্ডিনালরা একত্রিত হবেন এবং নতুন পোপ বেছে নেবেন। এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের দিকে এখন বিশ্বজুড়ে মানুষের নজর।
২০১৩ সালে পোপ নির্বাচনের সময়কার ঘটনার কথা মনে করে অনেকে বলছেন, নতুন পোপ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৩ সালে পোপ ফ্রান্সিস নির্বাচিত হওয়ার পর চার্চের কার্যক্রমে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে।
তিনি সংস্কারের পথে হেঁটেছিলেন, যা অনেকের কাছে উৎসাহের কারণ হলেও রক্ষণশীলদের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ তৈরি করেছিল। এবার তাই সম্ভবত এমন একজন নেতাকে বেছে নেওয়া হবে যিনি স্থিতিশীলতা আনবেন এবং বিভেদ কমাতে সাহায্য করবেন।
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন পোপের প্রধান কাজ হবে চার্চের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনা। এমন একজন নেতাকে প্রয়োজন যিনি দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতি রাখবেন, তবে একই সঙ্গে চার্চের প্রশাসনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে পারবেন।
পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় প্রভাবশালী কার্ডিনালদের মধ্যে কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন ফিলিপাইনের কার্ডিনাল লুইস আন্তোনিও তাগলে। তিনি পোপ ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং সংস্কারপন্থী হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে।
এছাড়াও, হাঙ্গেরির কার্ডিনাল পিটার এরদোর নামও শোনা যাচ্ছে, যিনি রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত। কঙ্গোর কার্ডিনাল ফ্রাঙ্কোয়েস-জ্যাভিয়ের অ্যামবোঙ্গোও আলোচনায় রয়েছেন, যিনি মানবাধিকার এবং দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত।
ইতালীয়দের মধ্যে ভ্যাটিকানের সেক্রেটারি অফ স্টেট, পিয়েত্রো পারোলিনের নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে অভিজ্ঞ, পিয়েরবাতিস্তা পিজ্জাবালার নামও শোনা যাচ্ছে।
পোপ ফ্রান্সিস তাঁর মেয়াদে কার্ডিনাল নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে প্রতিনিধিত্ব বাড়িয়েছেন। বর্তমানে, যারা ভোট দেবেন, তাঁদের মধ্যে ৬৯টি দেশের কার্ডিনাল রয়েছেন। এর মধ্যে আফ্রিকা, এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও ওশেনিয়ার কার্ডিনালের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
ইউরোপ থেকে আসা কার্ডিনালের সংখ্যা কমেছে, তবে তাঁরা এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই পরিবর্তনের ফলে, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং চার্চের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাঁদের প্রভাব বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষ করে, সামাজিক ন্যায়বিচার, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং গাজায় যুদ্ধ বন্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি আরও বেশি গুরুত্ব পাবে।
তবে, নতুন পোপ নির্বাচনে ফ্রান্সিস-পন্থী কার্ডিনালদের সমর্থন সত্ত্বেও, কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমত থাকতে পারে। বিশেষ করে, নারী ও সমকামীদের অধিকারের মতো সামাজিক বিষয়গুলোতে কিছু কার্ডিনাল রক্ষণশীল অবস্থান নিতে পারেন।
ইতিমধ্যে, কার্ডিনালরা নির্বাচনের আগে তাঁদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন। তাঁরা নতুন পোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে মতামত বিনিময় করছেন। এই আলোচনা থেকেই বোঝা যাবে, চার্চের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কেমন হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা