গর্বের মুহূর্ত! ভেনেজুয়েলার প্রথম সন্ত হলেন ‘গরীবের ডাক্তার’, ঘোষণা পোপের

শিরোনাম: ভেনেজুয়েলার ‘গরীবের বন্ধু’ যোসে গ্রেগোরিওকে সাধু ঘোষণা, আনন্দের ঢেউ ল্যাটিন আমেরিকায়

ভ্যাটিকান সিটি থেকে: এক কঠিন সময়ে ভেনেজুয়েলার (Venezuela) জন্য আনন্দের খবর নিয়ে এলো পোপ। দেশটির ‘গরীবের বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত চিকিৎসক যোসে গ্রেগোরিও হার্নান্দেজকে (José Gregorio Hernández) অবশেষে সাধু (সেন্ট) ঘোষণা করা হয়েছে।

এই প্রথম কোনো ভেনেজুয়েলীয় নাগরিককে ক্যাথলিক চার্চের পক্ষ থেকে এই সম্মান জানানো হলো। সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে পোপ ফ্রান্সিস (Pope Francis) এই ঘোষণা দেন।

যোসে গ্রেগোরিওর সাধু হওয়ার ঘটনাটি শুধু ভেনেজুয়েলার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।

উনিশ শতকের শেষের দিকে এবং বিশ শতকের শুরুতে কারাকাসে (Caracas) চিকিৎসক হিসেবে দরিদ্র মানুষের প্রতি তাঁর নিবেদিত প্রাণ ছিলেন কিংবদন্তীতুল্য। তিনি গরিব রোগীদের কাছ থেকে কোনো ফি নিতেন না, বরং তাঁদের ওষুধ কেনার জন্য প্রায়ই নিজের পকেট থেকে অর্থ দিতেন।

তাঁর এই মানবতাবাদী কাজের জন্য তিনি ‘গরীবের বন্ধু’ (ডাক্তার অফ দ্য পোর) নামে পরিচিত হন। ১৯১৯ সালে এক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়।

সাধু ঘোষণার এই অনুষ্ঠানে শুধু যোসে গ্রেগোরিওই নন, আরও কয়েকজন ধর্মপ্রাণ মানুষকে সম্মানিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ভেনেজুয়েলার ধর্মীয় সংঘের প্রতিষ্ঠাতা মাদার কারমেন রেনডিলেস মার্তিনেজ, এবং পাপুয়া নিউ গিনির প্রথম সাধু পিটার তো রট।

পিটার তো রট ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ, যিনি ১৯৪৫ সালে বহুবিবাহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কারণে কারারুদ্ধ হন এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

সাধারণত, কোনো ব্যক্তিকে সাধু ঘোষণা করার আগে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা আছে কিনা, তা যাচাই করা হয়। কিন্তু যোসে গ্রেগোরিওর ক্ষেত্রে তাঁর প্রতি সাধারণ মানুষের গভীর শ্রদ্ধাবোধের কারণে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।

ভ্যাটিকান জানিয়েছে, যোসে গ্রেগোরিওর প্রতি জনগণের ব্যাপক ভক্তি ও ভালোবাসার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই সময়ে ভেনেজুয়েলার মানুষের জন্য এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে একটি বড় পাওয়া। বিগত কয়েক বছর ধরে দেশটির অর্থনীতি চরম সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

মুদ্রাস্ফীতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা—সব মিলিয়ে সেখানকার মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

অনেকেই দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে, একজন জাতীয় ব্যক্তিত্বকে সাধু হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া নিঃসন্দেহে তাঁদের মনে নতুন করে আশা জাগাবে।

ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে। সম্প্রতি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

যোসে গ্রেগোরিওর সাধু হওয়ার ঘটনাটিকে অনেকে একটি জাতীয় উৎসব হিসেবে দেখছেন। রাজধানী কারাকাসে এই উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

দেশটির সাধারণ মানুষ, এমনকি যাঁরা সরাসরি ক্যাথলিক নন, তাঁরাও এই উৎসবে সামিল হচ্ছেন।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *