পোপের মৃত্যুর পর নতুন ধর্মগুরু নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং সুদীর্ঘ। বিশ্বের ১৩০ কোটির বেশি ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর নেতৃত্ব নির্বাচনের এই পদ্ধতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।
সম্প্রতি পোপের মৃত্যুর পর এই প্রক্রিয়া নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে, যা সবার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, জেনে নেওয়া যাক এই নির্বাচনের পেছনের কিছু বিশেষ নিয়মকানুন।
পোপের মৃত্যুর পর ‘সিদে ভ্যাকান্তে’ (Sede Vacante) বা ‘শূন্য আসন’ অবস্থা শুরু হয়। এই সময়ে ভ্যাটিকানের প্রশাসনিক এবং আর্থিক বিষয়গুলো দেখাশোনার দায়িত্বে থাকেন ক্যামেরলেঙ্গো।
বর্তমানে এই পদে আছেন কার্ডিনাল কেভিন ফারেল। তিনিই পোপের মৃত্যুর খবর ঘোষণা করেন এবং তাঁর দপ্তর সিল করেন।
পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, কার্ডিনালরা একত্রিত হয়ে নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন।
নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য কার্ডিনালদের গোপন বৈঠক বা কনক্লেভ অনুষ্ঠিত হয়। এই কনক্লেভে শুধুমাত্র ৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরা ভোট দিতে পারেন।
নিয়ম অনুযায়ী, সাধারণত ১২০ জন কার্ডিনাল ভোট দিতে পারেন, যদিও বাস্তবে এই সংখ্যা বাড়তে পারে। বর্তমানে ১৩৫ জন কার্ডিনাল এই নির্বাচনের যোগ্য।
নির্বাচন প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে সম্পন্ন হয়। সিস্টিন চ্যাপেলের অভ্যন্তরে কার্ডিনালরা মিলিত হন এবং সেখানে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়।
ব্যালটে প্রত্যেক কার্ডিনাল তাদের পছন্দের প্রার্থীর নাম লেখেন। এরপর, ব্যালটগুলো গণনা করা হয় এবং ফলাফল ঘোষণার আগে, ভোটের সত্যতা যাচাই করার জন্য প্রতিটি ব্যালট একটি সুঁই ও সুতো দিয়ে গেঁথে দেওয়া হয়।
নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেতে হয়। যদি কোনো প্রার্থী এই সংখ্যক ভোট পেতে ব্যর্থ হন, তবে পুনরায় ভোট গ্রহণ করা হয়।
ভোটের ফল জানানোর জন্য সাদা বা কালো ধোঁয়া ব্যবহার করা হয়। নতুন পোপ নির্বাচিত হলে, সিস্টিন চ্যাপেল থেকে সাদা ধোঁয়া নির্গত হয় এবং ঘণ্টা বাজানো হয়, যা নতুন পোপ নির্বাচনের ঘোষণা দেয়।
এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও আলোচনা করা হয়।
এদের মধ্যে রয়েছেন ইতালির কার্ডিনাল পিয়েত্রো পারোলিন, কানাডার কার্ডিনাল মার্ক ওুলেট, অস্ট্রিয়ার কার্ডিনাল ক্রিস্টোফ শোনবর্ন, ফিলিপাইনের কার্ডিনাল লুইস তাগলে এবং ইতালির কার্ডিনাল মাত্তেও জুপ্পি।
পোপ নির্বাচনের এই প্রক্রিয়াটি শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি ক্যাথলিক চার্চের নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, একজন নতুন ধর্মগুরু নির্বাচিত হন, যিনি বিশ্বের কোটি কোটি ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস