ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বাইয়ের কাছে অবস্থিত একটি শহর, ভিবান্ডি। এখানকার পাওয়ারলুম শিল্প কয়েক দশক ধরে টিকে থাকলেও, বর্তমানে তা কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
অন্যদিকে যেমন সুতার দাম বেড়েছে, তেমনি বিদ্যুতের খরচও আকাশছোঁয়া। এর সাথে যুক্ত হয়েছে চীন থেকে আসা সস্তা পণ্যের প্রতিযোগিতা। ফলে, ভিবান্ডির ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রগুলো টিকে থাকার লড়াই করছে।
প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মুম্বাইয়ের কাছাকাছি থাকার কারণে ভিবান্ডি ছোট উৎপাদক ও সরবরাহকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এখানকার পাওয়ারলুমের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
বর্তমানে প্রায় তিন লক্ষ পাওয়ারলুম চালু থাকলেও, এদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
ভিবান্ডির পাওয়ারলুম শ্রমিক ৭০ বছর বয়সী আব্দুল সাত্তার, যিনি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় এইসব শব্দদূষণপূর্ণ, খারাপ আলো-বাতাসের মধ্যে কাজ করেছেন। তিনি জানান, একসময় এখানে তাঁত শিল্পের রমরমা অবস্থা ছিল।
দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেক অদক্ষ শ্রমিকের কাজের সুযোগ ছিল। যদিও মজুরি কম ছিল এবং কাজের সময় দীর্ঘ ছিল, তবুও এটি ছিল একটি নির্ভরযোগ্য উপার্জনের পথ।
কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।
ভিবান্ডি পাওয়ারলুম উইভার্স ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুল রশীদ তাহির মোমিনের মতে, গত কয়েক বছরে প্রায় ৩০ শতাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রধান কারণ হলো সুতার দাম বৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের উচ্চমূল্য, যা তাদের পক্ষে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন করে তুলেছে।
পুরনো প্রযুক্তির পাওয়ারলুমের পরিবর্তে এখন আধুনিক স্বয়ংক্রিয় তাঁত আসায় উৎপাদন দ্রুত হচ্ছে এবং কাপড়ের গুণগত মানও উন্নত হচ্ছে, যেখানে কম শ্রমিক প্রয়োজন হয়।
৫২ বছর বয়সী ইশতিয়াক আহমেদ আনসারি, যিনি একসময় ১১০টি পাওয়ারলুমের মালিক ছিলেন, চার বছর আগে তাঁর ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হন। বর্তমানে তিনি অন্য একটি কারখানায় ঠিকাদারের কাজ করেন।
তিনি বলেন, “এই শিল্প একসময় কৃষির পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মসংস্থান তৈরি করত। এখন এর এই অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগে।”
আব্দুল সাত্তার এখনো এই পেশায় টিকে আছেন, তবে তিনি চান না তাঁর ছেলে এই একই পেশায় আসুক। তিনি বলেন, “আমি এতদিন ধরে কোনোমতে আমার পরিবারের ভরণপোষণ করতে পেরেছি।
শরীর যতদিন সঙ্গ দেবে, ততদিন কাজ করে যাব। তবে আমি নিশ্চিত, আমি চাই না আমার ছেলে এই পেশায় আসুক।”
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি এই পরিস্থিতির দিকে তাকাই, তাহলে আমরা দেখতে পাই, আমাদের দেশের বস্ত্রশিল্পও একই ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে, আমাদেরও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং উৎপাদন খরচ কমানোর দিকে নজর দিতে হবে।
তা না হলে, ভিবান্ডির মতো আমাদের ঐতিহ্যবাহী শিল্পও হুমকির মুখে পড়বে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস
 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
				
			 
				
			 
				
			 
				
			