স্পেন ও পর্তুগালে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট, কিভাবে প্রস্তুত হবেন?
সম্প্রতি স্প্যান ও পর্তুগালে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা যায়, যার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হন। আধুনিক জীবনযাত্রা বিদ্যুতের ওপর কতটা নির্ভরশীল, তা এই ঘটনা প্রমাণ করে। বিদ্যুতের অভাবে জীবনযাত্রা কতটা কঠিন হয়ে উঠতে পারে, তা আবারও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই ঘটনা।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ এখনো পর্যন্ত স্পষ্ট নয়, তবে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তবে এমন বিপর্যয়ের জন্য আগে থেকে প্রস্তুত থাকাটা জরুরি। কারণ, বিদ্যুতের অভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও অনেক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এই ধরনের ঘটনার মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে কিছু জরুরি পরামর্শ দেওয়া হলো।
বিদ্যুৎ চলে গেলে কী করবেন?
বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে সবার আগে শান্ত থাকতে হবে। নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিস, যেমন – খাবার, জল ও আশ্রয়, সেগুলোর ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর দ্রুত নিরাপদ স্থানে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে হবে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া, বিশেষ করে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করা উচিত না। কারণ, রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হতে পারে, যা আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
- আলোর ব্যবস্থা: মোমবাতি বা গ্যাস লাইট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, আগুন লাগার সম্ভবনা থাকে। এছাড়া কার্বন মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাসের কারণেও সমস্যা হতে পারে। টর্চলাইট বা ব্যাটারিচালিত আলো ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ব্যাটারির ব্যবহার সীমিত রাখতে হবে, যাতে দীর্ঘ সময় ধরে আলো পাওয়া যায়।
- বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বন্ধ করা: অপ্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, যেমন – ওভেন বা স্টোভ, বন্ধ করে দিতে হবে। বিদ্যুৎ ফিরে আসার সময় ভোল্টেজের তারতম্যের কারণে এইসব সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়া, চালু অবস্থায় থাকলে তা দুর্ঘটনার কারণও হতে পারে।
- খাবার সংরক্ষণ: বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে খাবার নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই ফ্রিজ বা ডিপ ফ্রিজের দরজা কম খোলার চেষ্টা করতে হবে। খাবার সংরক্ষণে, প্রথমে সহজে নষ্ট হয়ে যায় এমন খাবার, যেমন – মাছ, মাংস ও সবজি, সেগুলো আগে ব্যবহার করতে হবে। এরপর ফ্রিজের খাবার এবং সবশেষে শুকনো খাবার ব্যবহার করতে হবে।
কিভাবে প্রস্তুত হবেন?
যে কোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় মানসিক এবং বাস্তবিক প্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (European Union)-এর পক্ষ থেকে তাদের সদস্য দেশগুলোর নাগরিকদের অন্তত ৭২ ঘণ্টার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার, জল ও অন্যান্য জরুরি জিনিস মজুত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধের সম্ভবনা, সাইবার হামলা, জলবায়ু পরিবর্তন ও মহামারীর মতো ঘটনাগুলোর কারণে যেকোনো সময় সংকট তৈরি হতে পারে।
- জরুরি জিনিস মজুত করুন: আপনার বাড়িতে কিছু জরুরি জিনিস মজুত রাখা উচিত। যেমন – খাবার, জল, টর্চলাইট, ব্যাটারি, নগদ টাকা, আইডি কার্ড ও প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র। এছাড়া, একটি রেডিও হাতের কাছে রাখতে পারেন, যা জরুরি তথ্য পেতে সাহায্য করবে।
- নগদ টাকা রাখুন: জরুরি অবস্থার কথা মাথায় রেখে কিছু নগদ টাকা অবশ্যই রাখতে হবে। কারণ, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অনেক সময় ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়।
- জামাকাপড় ও গরম জামাকাপড়: শীতকালে বিদ্যুতের অভাবে গরমের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নাও থাকতে পারে। তাই পর্যাপ্ত গরম জামাকাপড় ও কম্বল মজুত করে রাখা ভালো।
- জেনারেটর ব্যবহারের নিয়ম: যাদের বাড়িতে জেনারেটর আছে, তাদের অবশ্যই এর নিয়মাবলী ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। জেনারেটর ঘরের ভেতরে বা আবদ্ধ স্থানে চালানো উচিত নয়। কারণ, এটি থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। জেনারেটর থেকে সরাসরি ডিভাইসগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে। বাড়ির বিদ্যুতের লাইনের সঙ্গে এর সংযোগ দেওয়া উচিত না।
বিদ্যুৎ বিভ্রাট একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তাই এই ধরনের ঘটনার জন্য ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে প্রস্তুতি নেওয়াটা খুব জরুরি। আমাদের দেশেও লোডশেডিং একটি পরিচিত সমস্যা। তাই, এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র: