আশ্চর্য! ‘শুক্রকীটের ফাঁদ’ ব্যবহার করা ভয়ঙ্কর প্রাচীন পোকা!

আশ্চর্য আবিষ্কার! ৯৯ মিলিয়ন বছর আগের একটি ভীতিকর পোকা, যা শিকার ধরত ‘শুক্রাণু ফাঁদের’ মতো অঙ্গ দিয়ে!

বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যে পাওয়া একটি প্রাগৈতিহাসিক পোকার জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন, যা তাদের গবেষণার জগৎকে নতুন দিশা দেখাচ্ছে। এই পোকাটি ৯৯ মিলিয়ন বছর আগের, অর্থাৎ ক্রিটেসিয়াস যুগের মাঝামাঝি সময়ে পৃথিবীতে বিচরণ করত।

এর বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে *Sirenobethylus charybdis*। গ্রিক পুরাণের সমুদ্র দানব কেরিবিডিসের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে, কারণ এই পোকাটিও শিকার ধরার এক ভয়ংকর কৌশল অবলম্বন করত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পোকাটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এর পেটের গঠন। এটির পেটে ছিল ‘শুক্রাণু ফাঁদের’ মতো একটি বিশেষ অঙ্গ, যা শিকারকে আটকে রাখতে কাজে লাগত।

এই ফাঁদটি অনেকটা ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ নামক উদ্ভিদের মতো দেখতে ছিল। এর তিনটি অংশ ছিল, যা নড়াচড়া করতে পারত এবং শিকারের কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বন্ধ হয়ে যেত।

এই ফাঁদের ভেতরের দিকে ছিল সূক্ষ্ম লোমের মতো অংশ, যা শিকারের নড়াচড়া টের পেত। কোনো পোকামাকড় এই লোমে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গেই ফাঁদটি বন্ধ হয়ে যেত এবং শিকার আটকা পড়ে যেত।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, পোকাটি শিকারকে তৎক্ষণাৎ মেরে ফেলত না। বরং, এটি শিকারের শরীরে ডিম পাড়ত এবং সেই ডিম থেকে জন্ম নেওয়া বাচ্চাগুলো শিকারের শরীরে বেড়ে উঠত।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, *Sirenobethylus charybdis*-এর এই কৌশলটি বিবর্তনের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। তারা আরো জানিয়েছেন, আধুনিক কালের কিছু পিঁপড়ে জাতীয় পোকার মধ্যেও এমন বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, তবে *Sirenobethylus charybdis*-এর গঠন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

গবেষকরা জানিয়েছেন, এই পোকা সম্ভবত অ্যাম্বুশ শিকারী ছিল, অর্থাৎ এটি লুকিয়ে থেকে শিকারের জন্য অপেক্ষা করত। এর ছোট চোখ এবং ছোট আকারের পা থেকে বোঝা যায়, এটি খুব দ্রুত দৌড়াতে পারত না।

তাই সম্ভবত এটি কোনো গাছের পাতা বা অন্য কোনো স্থানে চুপ করে বসে থাকত এবং সুযোগ বুঝে শিকার ধরত।

চীনের রাজধানী নর্মাল ইউনিভার্সিটির গবেষক এবং এই গবেষণার প্রধান লেখক উ কিয়ং বলেছেন, “এই আবিষ্কার প্রমাণ করে, প্রাচীনকালেও পোকামাকড় শিকার ধরার অত্যাধুনিক কৌশল জানত। এটি পরজীবী পোকার বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তন করে দেবে।”

উ কিয়ং

এই আবিষ্কার ক্রিটেসিয়াস যুগের পোকামাকড়ের বৈচিত্র্য সম্পর্কে নতুন তথ্য সরবরাহ করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সেই সময়ে পোকামাকড় আজকের তুলনায় অনেক বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ ছিল।

তাই, এই ধরনের জীবাশ্ম গবেষণা আমাদের বিবর্তন সম্পর্কে আরো গভীর ধারণা দিতে পারে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *