প্রিন্স হ্যারির সমর্থনপুষ্ট একটি আফ্রিকান সংস্থা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে পড়েছে। ‘আফ্রিকান পার্কস’ নামক এই সংস্থাটি কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে তাদের বনরক্ষীদের দ্বারা স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর ধর্ষণ, মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ স্বীকার করেছে।
খবরটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
আফ্রিকান পার্কস বর্তমানে ১৩টি দেশের ২৩টি জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষিত এলাকার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্তের জন্য তারা একটি স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করে।
এই তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, কিছু ঘটনায় তাদের কর্মীরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তবে, লন্ডনের মানবাধিকার বিষয়ক আইন সংস্থা ‘ওমনিয়া স্ট্র্যাটেজি এলএলপি’র করা তদন্তের বিস্তারিত ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
আফ্রিকান পার্কস এক বিবৃতিতে জানায়, “আমরা ভুক্তভোগীদের প্রতি গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। ওমনিয়ার তদন্তে আমাদের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাগুলোও চিহ্নিত হয়েছে, বিশেষ করে ওডজালা-কোকুয়া জাতীয় উদ্যানের ব্যবস্থাপনার শুরুর দিকে আমাদের কিছু ত্রুটি ছিল।”
সংস্থাটি আরও জানায়, “আমরা চিহ্নিত হওয়া দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে, আমরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। গত পাঁচ বছরে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতি করেছি এবং ভবিষ্যতে ঝুঁকি কমাতে ওমনিয়ার সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছি।”
অন্যদিকে, ‘সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল’ নামক একটি সংগঠন, যারা এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি প্রথম তুলে ধরেছিল, আফ্রিকান পার্কসের এই বিবৃতির সমালোচনা করেছে।
সংগঠনটি তদন্তের বিস্তারিত ফলাফল প্রকাশ না করার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে।
সংস্থাটির পরিচালক ক্যারোলিন পিয়ার্স বলেন, “আফ্রিকান পার্কসের তত্ত্বাবধানে থাকা বনরক্ষীরা ওডজালা-কোকুয়া জাতীয় উদ্যানে বাকা সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষদের উপর নির্যাতন, ধর্ষণ ও অত্যাচার চালিয়েছে।
এই বিষয়ে সংস্থাটি বহু বছর ধরে অবগত ছিল।
শুধুমাত্র প্রিন্স হ্যারির কাছে অভিযোগ জানানোর পর এবং গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পরেই তারা এই ‘স্বাধীন তদন্ত’-এর ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এখনো বিস্তারিত জানতে পারিনি, কারণ আফ্রিকান পার্কস তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করতে রাজি নয়।
তারা আরও প্রতিবেদন, কর্মী নিয়োগ ও নির্দেশিকা প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু, আফ্রিকান পার্কস যখন এই ধরনের ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিল, তখন তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে, আমরা মনে করি না, তারা এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।”
প্রিন্স হ্যারি ২০১৬ সাল থেকে আফ্রিকান পার্কসের সঙ্গে যুক্ত হন এবং পরের বছর তিনি এই সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
২০২৩ সালে তাকে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আফ্রিকা মহাদেশ প্রিন্স হ্যারির খুব প্রিয় একটি জায়গা।
তিনি বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিগত ও সরকারি সফরে সেখানে গিয়েছেন।
২০১৬ সালে তিনি লেসোথোর প্রিন্স সিইসো-র সঙ্গে মিলে আফ্রিকার তরুণদের সহায়তা করার জন্য ‘সেনটেবেলে’ নামক একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
যদিও সম্প্রতি আর্থিক সংকট ও অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের কারণে প্রিন্স হ্যারি সেনটেবেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তবে, উন্নয়ন ও সংরক্ষণের নামে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার যেন খর্ব না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
সুন্দরবনেও বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় মানুষের অধিকার রক্ষার বিষয়টি সামনে এসেছে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম