প্রিন্স হ্যারির বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার: রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক জোড়ার আকুতি।
লন্ডন (এপি) – ব্রিটেনের রাজ পরিবারের সঙ্গে প্রিন্স হ্যারির সম্পর্ক যে এখনো স্বাভাবিক হয়নি, তা আবারও স্পষ্ট হল সম্প্রতি সম্প্রচারিত এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে হারের পরেই এই সাক্ষাৎকার দেন হ্যারি।
সাক্ষাৎকারে ৪০ বছর বয়সী প্রিন্স হ্যারি তাঁর পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি রাজপরিবার, ব্রিটিশ সরকার এবং সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে পুরনো কিছু অভিযোগও তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকারটিতে হ্যারির ব্যক্তিগত জীবন এবং রাজপরিবারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে।
সাক্ষাৎকারে হ্যারি জানান, তাঁর বাবা রাজা তৃতীয় চার্লস তাঁর সঙ্গে কথা বলেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টিকে উল্লেখ করেন। হ্যারির মতে, এই বিতর্কের মূল কারণ হলো পারিবারিক কলহ। তিনি আরও বলেন, যেহেতু তিনি আর রাজকীয় দায়িত্ব পালন করেন না, তাই তাঁর নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজপরিবারের কিছু কর্মকর্তার হাত ছিল।
২০২০ সালে হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান রাজকীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তাঁদের অভিযোগ ছিল, সংবাদমাধ্যম এবং রাজপরিবারের সদস্যরা তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন এবং তাঁদের প্রতি বর্ণবিদ্বেষী মনোভাব দেখিয়েছেন। এর পরে হ্যারির আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’ প্রকাশিত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।
হ্যারি জানান, তাঁর বাবা রাজা তৃতীয় চার্লস বর্তমানে ক্যান্সারে আক্রান্ত। তিনি বাবার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তাঁদের মধ্যে খুব বেশি সাক্ষাত হয় না। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সম্ভবত শেষকৃত্যের সময় অথবা আদালতের কোনো মামলার জন্য তাঁর যুক্তরাজ্যে ফেরা হতে পারে।
প্রিন্স হ্যারি তাঁর এবং তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে তিনি পঞ্চম স্থানে রয়েছেন। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ১০ বছর দায়িত্ব পালনকালে তিনি আফগানিস্তানেও যুদ্ধ করেছেন। হ্যারির আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন, আল-কায়েদা হ্যারিকে হত্যার হুমকি দিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
হ্যারি আরও জানান, ২০২০ সালের আগে পর্যন্ত তিনি রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পেতেন। কিন্তু বর্তমানে সরকারি অর্থায়নে তাঁর নিরাপত্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি নিজের খরচে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল রাখার অনুমতিও তাঁকে দেওয়া হয়নি। তিনি মনে করেন, এর ফলে তিনি এবং তাঁর পরিবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, তাঁর সন্তানদের ব্রিটিশ ঐতিহ্য থেকে দূরে থাকতে হতে পারে।
সাক্ষাৎকারে হ্যারি জানান, তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চান। তিনি মনে করেন, অতীতের তিক্ততা ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস