প্রিন্স উইলিয়াম: ডায়ানার জন্মদিনে গৃহহীনতা দূরীকরণে নতুন পদক্ষেপ
বিশ্বজুড়ে একটি উদ্বেগের নাম হলো গৃহহীনতা। উন্নত বিশ্বেও এর প্রভাব বিদ্যমান।
সম্প্রতি, ব্রিটেনের প্রিন্স উইলিয়াম তার প্রয়াত মা, প্রিন্সেস ডায়ানার জন্মবার্ষিকীতে গৃহহীনতা নিরসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন।
আগামী ১লা জুলাই, প্রিন্স উইলিয়াম শেফিল্ড শহরে তার ‘হোমওয়ার্ডস’ প্রকল্পের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদযাপন করবেন।
এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো গৃহহীনতাকে ‘বিরল, ক্ষণস্থায়ী এবং পুনরাবৃত্তিহীন’ করে তোলা।
প্রিন্স উইলিয়ামের মা, প্রিন্সেস ডায়ানা, সবসময়ই গৃহহীন মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।
তিনি শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতেন এবং তাদের মানবিক দিকটি তুলে ধরতেন।
মায়ের এই আদর্শকে অনুসরণ করে, প্রিন্স উইলিয়ামও বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, যেগুলি একসময় ডায়ানার সমর্থন লাভ করেছিল।
এর মধ্যে ‘সেন্টারপয়েন্ট’ এবং ‘দ্য প্যাসেজ’-এর মতো সংস্থা উল্লেখযোগ্য।
হোমওয়ার্ডস প্রকল্পটি বর্তমানে ছয়টি অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে: শেফিল্ড, নিউপোর্ট (ওয়েলস), অ্যাবারডিন (স্কটল্যান্ড), নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, বোর্নমাউথ, ক্রাইস্টচার্চ ও পুল এবং লন্ডনের ল্যামবেথ।
এই অঞ্চলে গৃহহীনতা সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এই প্রকল্পের সফলতার জন্য লয়েডস ব্যাংক ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৭৬ কোটি টাকার সমান (মে, ২০২৪-এর বিনিময় হার অনুসারে)।
এই বিনিয়োগ ভবিষ্যতে আরও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন তৈরিতে সহায়ক হবে।
প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে, ‘গ্লোবাল হোমলেসনেস ইনস্টিটিউট’-এর প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক ও হোমওয়ার্ডস ন্যাশনাল বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য, লিডিয়া স্ট্যাজেন বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা যা দেখছি, তা প্রত্যাশিত ছিল।
নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে, ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে এবং আমরা বাস্তব ফলাফল দেখতে শুরু করেছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, কোভিড-১৯ মহামারীর পর ফ্রন্টলাইন কর্মী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা বেড়ে গিয়েছিল।
সেই সময়ে ‘হোমওয়ার্ডস’ নতুন উদ্যম ও সম্পদ নিয়ে এসেছিল, যা খুবই প্রয়োজন ছিল।
প্রকল্পের সাফল্যের পেছনে প্রিন্স উইলিয়ামের নেতৃত্বের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, প্রিন্স উইলিয়াম এই প্রকল্পের জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
তাঁর এই নেতৃত্ব স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছে এবং কার্যক্রমকে আরও গতি দিয়েছে।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে, প্রিন্স উইলিয়াম শেফিল্ডের একটি স্কুলে যাবেন, যেখানে তিনি তরুণদের জন্য তৈরি করা ‘আপস্ট্রিম’ প্রোগ্রাম পরিদর্শন করবেন।
এই প্রোগ্রামের লক্ষ্য হলো, তরুণদের মধ্যে যারা গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে সহায়তা করা।
এই প্রোগ্রামটি অস্ট্রেলিয়ার ‘জিলং প্রকল্প’ থেকে অনুপ্রাণিত, যা যুবকদের মধ্যে গৃহহীনতা কমাতে সহায়ক হয়েছে।
হোমওয়ার্ডস প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো স্থানীয় পর্যায়ে উদ্ভাবনী ধারণা তৈরি করা এবং বাস্তবসম্মত প্রকল্পগুলোতে সহায়তা করা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্থানীয় পর্যায়ে যারা কাজ করছেন, তারাই এই পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি।
প্রিন্স উইলিয়ামের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
গৃহহীনতা একটি জটিল সমস্যা, এবং এর সমাধানে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা।
এই প্রকল্পের সাফল্য শুধু ব্রিটেনের জন্যই নয়, বরং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও একটি উদাহরণ হতে পারে।
বাংলাদেশেও গৃহহীন মানুষের সংখ্যা অনেক।
তাই, এই ধরনের প্রকল্পগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে, আমাদের দেশেও গৃহহীনতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: পিপলস