মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারগুলোতে কয়েদিদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে। সম্প্রতি নিউ অরলিন্স-এর একটি কারাগারে অভিনব কায়দায় ১০ জন কয়েদির পলায়ন বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। সেখানকার কর্মীর গাফিলতির সুযোগ নিয়ে তারা ইলেক্ট্রিক হেয়ার ট্রিমার ব্যবহার করে দেয়াল কেটে পালিয়ে যায়।
এই ঘটনাগুলো শুধু সিনেমার গল্পের মতো শোনালেও, বাস্তবতা হলো, প্রতি বছরই এমন ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পেছনে বেশ কিছু বিষয় দায়ী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কারাগার থেকে পালানোর প্রধান কারণ হলো ‘সুযোগ এবং তাড়না’। গুরুতর অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কয়েদিদের পালানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাদের হারানোর কিছু থাকে না।
এছাড়া, অপেক্ষাকৃত কম নিরাপত্তা-ব্যবস্থা যুক্ত কারাগারে, যেমন- হাফওয়ে হাউসে (শাস্তির মেয়াদ কমানোর উদ্দেশ্যে তৈরি হওয়া কারাগার) পালানোর ঘটনা বেশি ঘটে। ফেডারেল ডেটা অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ফেডারেল অপরাধের ০.৪ শতাংশ ছিল পালানোর ঘটনা।
যুক্তরাষ্ট্রের কারাসমূহ থেকে কয়েদি পালানোর পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জনবলের অভাব। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী না থাকায় অনেক সময় ছোটখাটো ভুল হয়ে যায়।
কারারক্ষীরা হয়তো সব কয়েদিকে ভালোভাবে তল্লাশি করেন না, অথবা তাদের কক্ষে ঠিকমতো নজরদারি করা হয় না। নিরাপত্তা বিষয়ক পরামর্শদাতা জোসেফ গঞ্জা’র মতে, কয়েদিরা এই দুর্বলতাগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করে এবং সুযোগ পেলে পালায়।
অনেক সময় তারা মাসব্যাপী নিরাপত্তা কর্মীদের ভুলগুলো পর্যবেক্ষণ করে এবং পালানোর পরিকল্পনা করে।
কারাগারের পুরনো অবকাঠামোও অনেক সময় পালানোর কারণ হয়। অনেক পুরনো ভবনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল থাকে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগও সেখানে কম থাকে।
ফলে কয়েদিদের পালিয়ে যাওয়া সহজ হয়। নিউ অরলিন্স-এর ঘটনায় সেখানকার কর্তৃপক্ষ পুরোনো তালা এবং অন্যান্য ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন।
তবে, পালানো যতটা কঠিন, তার চেয়েও কঠিন হলো ধরা পড়া। গবেষণায় দেখা গেছে, পালানোর এক বছরের মধ্যে প্রায় ৯১ শতাংশ কয়েদিকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে ৮১.৫ শতাংশকে এক সপ্তাহের মধ্যেই ধরে ফেলা হয়।
পালিয়ে যাওয়া কয়েদিদের ধরতে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা খুব জরুরি। কিন্তু পুলিশের প্রতি যদি মানুষের আস্থা কম থাকে, তাহলে কয়েদিদের খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। লুইজিয়ানায় পুলিশের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে খারাপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে।
সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে পুলিশের প্রতি আস্থার অভাব দেখা যায়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন