শিরোনাম: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কমছে পৃথিবীর পানির ভান্ডার, কৃষিতে দেখা দিতে পারে চরম সংকট।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর মাটি, নদ-নদী ও হ্রদে পানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। সম্প্রতি ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। এর ফলে কৃষি, বিশেষ করে সেচ নির্ভর কৃষিকাজে মারাত্মক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এছাড়াও, এই পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ারও সম্ভবনা রয়েছে।
মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইড্রোলজি অধ্যাপক ডংরিয়ল রিউ এবং তার সহকর্মী কি-ওন সিও এক অনুসন্ধানে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আবিষ্কার করেন। তারা জানান, গত প্রায় ২০ বছরে পৃথিবীর মাটিতে জলের পরিমাণ ২,০০০ গিগাটনেরও বেশি কমে গেছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এই পরিমাণ গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলনের দ্বিগুণেরও বেশি।
গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উদ্ভিদের উপর তাপের চাপ বাড়ছে, ফলে তাদের বেশি পানির প্রয়োজন হচ্ছে। এছাড়া, কৃষি, বিশেষ করে সেচ নির্ভর কৃষিকাজে পানির অতি ব্যবহারও একটি বড় সমস্যা। মানুষজন এখনও পর্যন্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ক্যাথরিন জ্যাকবস এই বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, “অতীতেও দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে এবং ভবিষ্যতে সম্ভবত এমনটা ঘটবে। তবে আমাদের জীবদ্দশায় এই প্রবণতা পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। কারণ, গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি ভবিষ্যতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখবে, যার ফলে বাষ্পীভবন এবং বাষ্পীভবনের হার শীঘ্রই হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।”
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, পৃথিবীর আদ্রতা পরিবর্তনের কারণে এর ঘূর্ণনেও সামান্য পরিবর্তন হচ্ছে। জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবিদ্যা ও ডেটা সায়েন্সের অধ্যাপক লুইস সামানিয়াগো এই গবেষণা সম্পর্কে বলেন, “এটি একটি উত্তেজনাপূর্ণ গবেষণা এবং বিভিন্ন বিষয়কে একত্রিত করে সঠিক সময়ে এমন একটি বিষয় যাচাই করা সম্ভব হয়েছে যা আগে সম্ভব ছিল না।”
তিনি আরও যোগ করেন, এই গবেষণা শুধু কৌতূহলোদ্দীপকই নয়, বরং এটি একটি সতর্কবার্তা। পৃথিবীর এই পরিবর্তন যেন একটি ‘ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম’-এর মতো, যেখানে হৃদস্পন্দনের সমস্যা ধরা পড়েছে।
এই গবেষণা জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি ব্যবস্থাপনার গুরুত্বকে আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে। বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার এবং পানির সঠিক ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছেন।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস