শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ এখন অনেকের কাছেই সহজলভ্য হয়েছে। অল্প পুঁজি নিয়ে অনেকেই এখন সরাসরি শেয়ার কেনাবেচা করছেন, আবার মিউচুয়াল ফান্ড এবং এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ETF)-এর মতো বিকল্পগুলিও সহজলভ্য হওয়ায় বিনিয়োগের সুযোগ বেড়েছে।
তবে, বিনিয়োগের এই প্রসারিত দুনিয়ায় একটি বিষয় প্রায়ই আলোচনার কেন্দ্রে আসে – প্রাইভেট ইক্যুইটি বা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কোম্পানিতে বিনিয়োগ। সাধারণত, এই ধরনের বিনিয়োগ আগে শুধু ধনী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
কিন্তু বর্তমানে, অনেক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছেও এই সুযোগ নিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, সবার জন্য কি এই প্রাইভেট ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করা লাভজনক? এই বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ, প্রাইভেট ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের কিছু বিশেষ দিক রয়েছে যা সাধারণ বিনিয়োগের থেকে আলাদা।
প্রথমত, প্রাইভেট ইক্যুইটির বাজারে স্বচ্ছতার অভাব দেখা যায়। পাবলিক মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করলে, বিনিয়োগকারীরা নিয়মিতভাবে তাদের বিনিয়োগের বিস্তারিত তথ্য পান।
কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, লাভ-ক্ষতি, শেয়ারের দাম—এসব তথ্য সহজেই পাওয়া যায়। কিন্তু প্রাইভেট ইক্যুইটির ক্ষেত্রে, এই ধরনের তথ্য পাওয়া কঠিন। ফলে, বিনিয়োগকারীদের জন্য তাদের বিনিয়োগের ওপর নজর রাখা এবং ঝুঁকি মূল্যায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
দ্বিতীয়ত, প্রাইভেট ইক্যুইটির বিনিয়োগ সাধারণত কম তরল হয়। অর্থাৎ, প্রয়োজন অনুযায়ী সহজে এই বিনিয়োগকে নগদে রূপান্তরিত করা যায় না।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি একটি পাবলিক কোম্পানির শেয়ার কেনেন, তাহলে যেকোনো সময় তা বিক্রি করে দিতে পারেন। কিন্তু প্রাইভেট ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করলে, সেই টাকা সহজে ফেরত পাওয়া যায় না। বিনিয়োগের সময়সীমা অনেক দীর্ঘ হতে পারে এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
তৃতীয়ত, প্রাইভেট ইক্যুইটির পারফরম্যান্স পরিমাপ করা কঠিন। সাধারণত, এই ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইন্টারনাল রেট অফ রিটার্ন (IRR)-এর মতো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যা পাবলিক মার্কেটের রিটার্নের সঙ্গে সরাসরি তুলনা করা যায় না।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ফি বাদ দেওয়ার পর প্রাইভেট ইক্যুইটির রিটার্ন পাবলিক ইক্যুইটি বাজারের কাছাকাছি থাকে। মর্নিংস্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গঠিত প্রাইভেট ইক্যুইটি ফান্ডগুলি খুব একটা ভালো ফল করতে পারেনি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রাইভেট ইক্যুইটি এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মতো বিনিয়োগগুলিতে ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। কারণ, এই ধরনের ফান্ডগুলি সাধারণত ছোট এবং নতুন কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগ করে, যাদের টিকে থাকার সম্ভাবনা কম থাকে।
তাহলে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রাইভেট ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ কতটা যুক্তিযুক্ত? এই প্রশ্নের উত্তর হলো, প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর নিজস্ব ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা এবং আর্থিক লক্ষ্যের ওপর বিষয়টি নির্ভর করে।
তবে, বিনিয়োগের আগে অবশ্যই বিস্তারিত গবেষণা করা উচিত এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, তারল্য এবং ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করা জরুরি।
মনে রাখতে হবে, বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো আপনার সঞ্চিত অর্থ বৃদ্ধি করা। তাই, আকর্ষণীয় প্রস্তাবের পেছনে না ছুটে, আপনার আর্থিক লক্ষ্য এবং ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
বর্তমানে বাংলাদেশেও শেয়ার বাজার, বন্ড, সঞ্চয়পত্র এবং বিভিন্ন প্রকার মিউচুয়াল ফান্ডের মতো বিকল্পগুলিতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তাই, প্রাইভেট ইক্যুইটির আকর্ষণীয় প্রস্তাবের পরিবর্তে, স্থানীয় বাজারের সুযোগগুলো ভালোভাবে যাচাই করে বিনিয়োগ করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
তথ্য সূত্র: মর্নিংস্টার ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।