শিরোনাম: লন্ডনের সুরক্ষিত ভল্টে ধনীদের গোপন সম্পদ, বাংলাদেশেও কি এমন সুযোগ আছে?
ধনীদের মূল্যবান সামগ্রী নিরাপদে রাখার জন্য লন্ডনে তৈরি হয়েছে অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পন্ন একটি ভল্ট। এই ভল্টে রয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিস স্ক্যানার, ইলেক্ট্রনিক কি কার্ড রিডার-এর মতো অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ব্রিটেনের রাজধানী ওয়েস্ট এন্ড এলাকার একটি পুরনো ম্যানসনে অবস্থিত এই ভল্টটি ইউরোপের অন্যতম সুরক্ষিত ব্যক্তিগত ভল্ট হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রবেশ করতে হলে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা পার হতে হয়। এমনকি, স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের হামলা থেকেও এটি সুরক্ষিত।
এই ভল্টের ভেতরে রাখা হয় মূল্যবান সব জিনিসপত্র। সাধারণত, নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, দামি শিল্পকর্ম, নামিদামি ব্র্যান্ডের হ্যান্ডব্যাগ-এর মতো মূল্যবান জিনিস এখানে জমা রাখা হয়।
তবে, এর বাইরেও এমন কিছু জিনিস এখানে রাখা হয় যা শুনলে অবাক হতে হয়। পারিবারিক স্মৃতিচিহ্ন, দুর্লভ ছবি, এমনকি সীমিত সংস্করণের পোকেমন কার্ডও এখানে জমা থাকে। ভল্টের কর্মীরা জানান, অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী একে অপরের থেকে গোপন করে তাদের মূল্যবান জিনিস এখানে রাখেন।
কারো মৃত্যুর পরেই কেবল সেই গোপন জিনিস সম্পর্কে জানা যায়।
আইবিভি ইন্টারন্যাশনাল ভল্টস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শন হোয়ে জানান, এই ভল্টে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জমা রয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৫৬০ থেকে ৮৪০ কোটি টাকার সমান। (২০২৪ সালের ২৬শে মে, প্রতি পাউন্ডের বিনিময় মূল্য ১৩৯.৯২ টাকা ধরে হিসাব করা হয়েছে)।
সাধারণত, বছরে ১,৩৫০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে এখানে একটি ছোট আকারের ভল্ট ভাড়া পাওয়া যায়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১,৫০,০০০ টাকার সমান। (২০২৪ সালের ২৬শে মে, প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ১১০.৮০ টাকা ধরে হিসাব করা হয়েছে)।
অন্যদিকে, বড় আকারের ভল্টের ভাড়া বছরে প্রায় ২০,৩০০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২,৩৩,০০০ টাকার সমান।
তবে, এই ভল্টে কারা তাদের জিনিসপত্র জমা রাখেন, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে। কারণ, এখানে গ্রাহকদের তাদের সম্পদের পরিমাণ বা বিস্তারিত তথ্য জানানোর বাধ্যবাধকতা নেই।
তবে, গ্রাহকদের বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করার পরেই এখানে সদস্যপদ দেওয়া হয়। মাদক দ্রব্য, অবৈধ অস্ত্র, অথবা অন্য কোনো নিষিদ্ধ জিনিস এখানে রাখা সম্পূর্ণ নিষেধ।
যদিও অনেক সমালোচক মনে করেন, এই ধরনের ভল্টগুলো অপরাধীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হতে পারে। কারণ, এখানে ব্যাংকের মতো কঠোর নজরদারি থাকে না।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাইভেট ভল্টে অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্যসহ প্রায় ৮৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ জব্দ করা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগের কারণে ব্যক্তিগত ভল্টের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। অনেক দেশে মানুষ তাদের সরকারের উপর আস্থা রাখতে পারছে না, তাই তারা তাদের মূল্যবান সম্পদ নিরাপদে রাখতে চাইছে।
আইবিভি ইন্টারন্যাশনাল ভল্টস-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে। বর্তমানে এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এর মধ্যে রয়েছে কেপ টাউন, জোহানেসবার্গ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সুইজারল্যান্ড।
তবে, বাংলাদেশে এখনও এই ধরনের সুরক্ষিত ভল্টের ধারণা তেমন পরিচিত নয়। এখানে সাধারণত ব্যাংকগুলোতে লকার ভাড়া নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে গ্রাহকরা তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র জমা রাখতে পারেন।
কিন্তু লন্ডনের এই ভল্টের মতো উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গোপনীয়তা এখনো আমাদের দেশে দেখা যায় না।
বর্তমানে, এই ভল্টে জিনিস জমা রাখার গড় মেয়াদ প্রায় তিন থেকে চার বছর।
গ্রাহক তার ভল্ট বন্ধ করার সময় নতুন তালা লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়। এখানে গ্রাহকের নিজস্ব চাবি ছাড়া অন্য কারো পক্ষে ভল্টের ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব নয়।
তথ্য সূত্র: CNN