ঘুমের সমস্যা সমাধানে অনেকেই রাতে গান শোনা বা পছন্দের কোনো অনুষ্ঠান দেখতে পছন্দ করেন। কিন্তু ভালো ঘুমের জন্য এই অভ্যাস কতটা উপকারী?
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ঘুমের এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরা হয়েছে। তাদের মতে, রাতে কিছু শুনে ঘুমোতে যাওয়া অনেকের জন্য সহায়ক হতে পারে, তবে ঘুমের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমোতে যাওয়ার আগে হালকা শব্দ শোনা ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে। এর কারণ হলো, এটি আমাদের শরীরকে ধীরে ধীরে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।
যেমন, কোনো অডিওবুক, হালকা সুরের গান অথবা পরিচিত কোনো অনুষ্ঠান শোনা যেতে পারে। ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সমস্যায় ভোগা অর্ধেকের বেশি মানুষ ঘুমের সহায়ক হিসেবে গান ব্যবহার করেন। তবে, ঘুমের আগে স্ক্রিনে তাকিয়ে কিছু দেখা বা স্ক্রল করা ঘুমের স্বাস্থ্যবিধির পরিপন্থী।
তবে, জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের নিউরোলজির অধ্যাপক এবং ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. রাচেল সালাস (Dr. Rachel Salas) বলেন, “এটা অনেকটা গোল্ডিলক্সের মতো।
অর্থাৎ, যা আপনার জন্য কাজ করে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের অভ্যাসের পাশাপাশি আপনার পরিবেশও ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে।
ড. সালাস আরও যোগ করেন, সবার শরীর ভিন্ন, তাই কারো জন্য রাতে কিছু শুনে ঘুম ভালো হতে পারে।
কিন্তু ঘুমের এই উপকারিতা নিশ্চিত করতে এবং কোনো ধরনের খারাপ প্রভাব এড়াতে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে।
যেমন, আপনি যা শুনছেন, তা যেন আপনাকে জাগিয়ে না তোলে। সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. শালিনি পারুথি (Dr. Shalini Paruthi) বলেন, “যদি কিছু শোনার কারণে একজন ব্যক্তি বেশি সক্রিয় থাকে এবং ঘুম কম হয়, তবে এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমের সময় পছন্দের কিছু শোনার ক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে, সেটি যেন আপনাকে ঘুমের দিকে নিয়ে যায়, জাগিয়ে না তোলে।
যুক্তরাজ্যের বার্কশায়ারের মনোবিজ্ঞানী এবং ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. লিন্ডসে ব্রাউনিং (Dr. Lindsay Browning) পরামর্শ দেন, “এমন কিছু বেছে নিন যা খুব বেশি আকর্ষণীয় নয়, যাতে আপনার মস্তিষ্ক জেগে থাকার জন্য উৎসাহিত না হয়।
পরিচিত কোনো গল্পের অডিও অথবা আগে শোনা কোনো অনুষ্ঠান শোনা ভালো, যা আপনাকে ঘুমের দিকে সাহায্য করবে।
ঘুমের জন্য শব্দ সহায়ক হলেও, যদি তা সারারাত চলতে থাকে, তবে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ড. ব্রাউনিং বলেন, “ঘুমিয়ে পড়ার পরেই শব্দ বন্ধ করার জন্য একটি টাইমার সেট করা গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া, যদি আপনি এমন কোনো প্রোগ্রাম শোনেন যেখানে অপ্রত্যাশিত শব্দ বা ভলিউম থাকে, তবে তা আপনার ঘুমকে হালকাভাবে হলেও বিঘ্নিত করতে পারে।
ড. সালাস আরও বলেন, “এ ধরনের শব্দ ঘুমের মধ্যে আপনাকে জাগিয়ে তুলতে পারে, যা ঘুমের গুণগত মান কমিয়ে দেয়।
তবে, একটানা এবং শান্ত শব্দ, যেমন সাদা আওয়াজ (white noise) বা এএসএমআর (ASMR) ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে।
বিশেষ করে, যারা কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বাস করেন, তাদের জন্য এটি খুব উপকারী। এএসএমআর (অটোনোমাস সেন্সরি মেরিডিয়ান রেসপন্স) হলো এক ধরনের অনুভূতি, যা হালকা শব্দ বা দৃশ্যের মাধ্যমে তৈরি হয় এবং যা মানুষকে শিথিল করতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে, ঘুমের জন্য কিছু শোনার পরেও যদি ঘুম না আসে, তাহলে দিনের কিছু কৌশল কাজে লাগাতে পারেন। ড. ব্রাউনিং বলেন, “দিনের বেলা উদ্বেগের কারণগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের চেষ্টা করুন।
যদি কেউ অনিদ্রা (insomnia) বা ঘুমের সমস্যায় ভুগেন এবং রাতে কিছু শুনেও উপকার না পান, তবে একজন ঘুম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ড. পারুথি বলেন, “অনিদ্রা নিরাময়ের জন্য বেশ কয়েকটি কার্যকরী চিকিৎসা রয়েছে, যেমন কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি।
তথ্যসূত্র: সিএনএন