মদ: আমেরিকায় বিষ মেশানো হল, তবু কেন পান করলেন মানুষ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক সময় মদ্যপান নিষিদ্ধ ছিল। সেই সময়ে, সরকার শিল্পে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা অ্যালকোহলে বিষাক্ত রাসায়নিক মিশিয়ে দিত।

এর ফল হয়েছিল ভয়ংকর। বিষাক্ত মদ পানে কয়েক বছরেই মারা গিয়েছিল ৫০,০০০ এর বেশি মানুষ।

১৯২০ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় মদ তৈরি, বিক্রি ও পান করা নিষিদ্ধ ছিল। এই সময়ে চোরাকারবারিরা গোপনে মদ তৈরি ও বিক্রি করত।

তাদের রুখতে সরকার এক অভিনব কৌশল নেয়। তারা শিল্পে ব্যবহারের জন্য তৈরি অ্যালকোহলে বিষাক্ত উপাদান মেশানো শুরু করে, যাতে মানুষ তা পান করতে না পারে। কিন্তু এর পরিণতি হয় মারাত্মক।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে হাজার হাজার মানুষ বিষাক্ত অ্যালকোহল পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেকে দৃষ্টিশক্তি হারায়, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে।

এমনকি অনেক সময় দেখা যেত, যারা মদ পান করত না, তারাও এর শিকার। কারণ, চোরাকারবারিরা লাভের লোভে ভেজাল মেশাতো, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছিল।

নিউইয়র্কের প্রথম চিফ মেডিকেল পরীক্ষক চার্লস নরিস এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। তিনি একে ‘গণহারে মানুষ নিধনের সরকারি প্রচেষ্টা’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

নরিসের মতে, সরকার জানত, তারা যা করছে, তা মানুষের জীবনহানির কারণ হচ্ছে, কিন্তু তারা তাদের কার্যক্রম বন্ধ করেনি।

ঐতিহাসিক পিটার লিবহোল্ডের মতে, সরকার হয়তো সরাসরি মানুষ মারতে চায়নি, কিন্তু তাদের নীতি ছিল, যারা মদ পান করতে চায়, তাদের পরিণতি ভোগ করতে হবে।

তবে এর ফল সবার জন্য সমান ছিল না। বিত্তশালীরা বৈধ উপায়ে মদ সংগ্রহ করতে পারতেন, কিন্তু দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে কোনো বিকল্প ছিল না।

এই ঘটনার একটি বড় কারণ ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সরকার তাদের আয়ের একটি বড় উৎস, যেমন অ্যালকোহল বিক্রি থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।

তাই তারা চেয়েছিল, অ্যালকোহলকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে কেউ কর ফাঁকি দিতে না পারে।

এই ঘটনার একটি বড় শিক্ষা হলো, কোনো বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রয়োগের আগে এর সম্ভাব্য খারাপ দিকগুলো বিবেচনা করা উচিত। এছাড়া, জনস্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের দায়বদ্ধতা অনস্বীকার্য।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *