কেন কেউ প্রশ্ন করে না? অজানা রহস্য!

আলাপচারিতার জগতে কৌতূহলের অভাব: আমরা কি প্রশ্ন করতে ভুলে যাচ্ছি?

বর্তমান সমাজে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে, এমন কিছু মানুষের দেখা মেলে যারা নিজেদের কথা বলতে ভালোবাসেন, কিন্তু অন্যদের সম্পর্কে জানতে তেমন একটা আগ্রহ দেখান না। তারা নিজেদের গল্প শোনাতে মুখর, কিন্তু অন্যদের প্রশ্ন করতে যেন কুণ্ঠাবোধ করেন। এই প্রবণতা বর্তমানে বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে মনোবিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ হলো, এই ধরনের আচরণে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা হয়তো নিজেদের প্রতি বেশি মনোযোগী। বর্তমান যুগে ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যবাদের (individualism) বাড়বাড়ন্তের কারণে অনেকে নিজেদের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ছেন। অন্যদের প্রতি আগ্রহ দেখানোর পরিবর্তে তারা নিজেদের নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকছেন। উদ্বেগের (anxiety) কারণেও অনেকে সামাজিক সম্পর্কগুলো এড়িয়ে যেতে চান। তাদের মনে হতে পারে, প্রশ্ন করা মানেই হয়তো দুর্বলতা প্রকাশ করা।

এই ধরনের আচরণে পরিচিতজনদের মধ্যে তৈরি হয় এক ধরনের অস্বস্তি। যারা সবসময় কথা বলেন কিন্তু শোনেন না, তাদের সঙ্গে কথোপকথন একতরফা হয়ে যায়। পারস্পরিক আলোচনার পরিবর্তে এটি বক্তৃতায় পরিণত হয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে যারা শ্রোতা, তারা নিজেদের গুরুত্বহীন মনে করতে পারেন। তাদের মনে হতে পারে, তাদের কথা বলার বা নিজেদের অভিজ্ঞতা জানানোর কোনো সুযোগ নেই।

তবে, কৌতূহল দেখানোর অন্য কিছু ধরনও থাকতে পারে। সব সময় প্রশ্ন করাই যে আলোচনার একমাত্র পথ, তা নয়। অনেক সময়, একসঙ্গে কোনো কাজ করা বা কোনো বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করাও কথোপকথনের অংশ হতে পারে। যেমন, বন্ধুদের সঙ্গে মিলে কোনো রান্নার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া অথবা কোনো খেলা উপভোগ করার সময়, পারস্পরিক আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং সহানুভূতি খুব জরুরি। মানুষের প্রতি কৌতূহল প্রকাশ করা সম্পর্কের গভীরতা বাড়ায়, যা সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য।

যদি আমরা সমাজের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব, পারস্পরিক আলোচনার এই অভাব একটি গুরুতর সমস্যা। এর ফলে, সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এবং মানুষে মানুষে দূরত্ব বাড়ছে।

সুতরাং, আমাদের সবারই উচিত, অন্যদের প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হওয়া এবং তাদের সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করা। কথা বলার সময়, অন্যদেরও নিজেদের কথা বলার সুযোগ দেওয়া উচিত। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে আমরা কেবল নিজেদের মধ্যেই সম্পর্ক গভীর করতে পারি না, বরং একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ সমাজও গড়তে পারি।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *