জো বাইডেনের রোগ: প্রোস্টেট স্ক্রিনিং নিয়ে ইউরোলজিস্টের পরামর্শ!

পুরুষদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে প্রোস্টেট ক্যান্সার স্ক্রিনিং: আপনার যা জানা দরকার

প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ার পরে, প্রোস্টেট ক্যান্সার স্ক্রিনিং নিয়ে আলোচনা আবারও সামনে এসেছে। আমাদের দেশের পুরুষদের মধ্যে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং সঠিক সময়ে স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা জরুরি।

প্রোস্টেট ক্যান্সার শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে ‘প্রোস্টেট-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন’ (PSA) পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসুন, এই পরীক্ষা, এর প্রয়োজনীয়তা এবং আমাদের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

প্রোস্টেট ক্যান্সার কী?

প্রোস্টেট হলো পুরুষদের প্রজননতন্ত্রের একটি অংশ, যা মূত্রাশয়ের নিচে অবস্থিত। এর প্রধান কাজ হলো বীর্যের জন্য তরল তৈরি করা। প্রোস্টেট গ্রন্থিতে ক্যান্সার হলে তাকে প্রোস্টেট ক্যান্সার বলা হয়। এটি সাধারণত বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

PSA পরীক্ষা কী?

PSA হলো প্রোস্টেট গ্রন্থি থেকে তৈরি হওয়া একটি প্রোটিন। PSA পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে এর মাত্রা মাপা হয়। যদি PSA-এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তবে তা প্রোস্টেট ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে।

সাধারণত, ল্যাব পরীক্ষার ফলাফলে PSA-এর মাত্রা ৪-এর বেশি হলে অস্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। তবে, দ্রুত বাড়তে থাকা কম মাত্রাও উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

এই পরীক্ষার গুরুত্ব

PSA পরীক্ষা প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সাহায্য করে। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে এর চিকিৎসা সহজ হয় এবং জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনাও বাড়ে। তবে, PSA-এর মাত্রা বেশি হলেই যে ক্যান্সার হবে, তা নয়।

কিছু ক্ষেত্রে প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি বা প্রদাহের কারণেও PSA-এর মাত্রা বাড়তে পারে। তাই, PSA পরীক্ষার ফল একটি প্রাথমিক ধারণা দেয়, যা বিস্তারিত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

স্ক্রিনিং গাইডলাইনস এবং বিতর্ক

বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা প্রোস্টেট ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের জন্য গাইডলাইন তৈরি করেছে। স্ক্রিনিং কখন শুরু করা উচিত, সে বিষয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। কোনো কোনো গাইডলাইন অতিরিক্ত চিকিৎসার ঝুঁকি কমাতে স্ক্রিনিং সীমিত করার পরামর্শ দেয়।

আবার, কোনো কোনো গাইডলাইন রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণের ওপর জোর দেয়।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

বিশেষজ্ঞরা সাধারণত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পুরুষদের (যেমন, যাদের পরিবারের কোনো সদস্যের প্রোস্টেট ক্যান্সার আছে) ৪০ বছর বয়স থেকে PSA স্ক্রিনিং শুরু করার পরামর্শ দেন। সাধারণভাবে, ৫০ বছর বয়স থেকে নিয়মিত স্ক্রিনিং করানো যেতে পারে।

তবে, প্রতিটি ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে একটি উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে করণীয়

বাংলাদেশে প্রোস্টেট ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের সুযোগ রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই পরীক্ষা করানো যায়। স্ক্রিনিংয়ের খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া ভালো।

স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন হতে পারে।

সচেতনতা এবং প্রতিরোধের উপায়

প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন জরুরি। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ধূমপান পরিহার করা উচিত। প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

উপসংহার

প্রোস্টেট ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে এর চিকিৎসা সম্ভব। নিয়মিত স্ক্রিনিং, সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। তাই, পুরুষদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *