পুরুষদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা সবসময়ই জরুরি। অনেক পুরুষই তাঁদের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। কিন্তু এই ধরনের গোপনীয়তা অনেক সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
তাঁদের মধ্যে প্রোস্টেট (Prostate) সংক্রান্ত সমস্যাগুলি খুবই সাধারণ, বিশেষ করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যাগুলি বাড়ে। আসুন, প্রোস্টেট গ্রন্থি এবং এর সমস্যাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
প্রোস্টেট আসলে কী?
প্রোস্টেট হলো পুরুষদের প্রজননতন্ত্রের একটি অংশ, যা দেখতে অনেকটা একটি ছোট আকারের পেস্তার মতো। এটি মূত্রাশয়ের নিচে অবস্থিত এবং এর প্রধান কাজ হলো বীর্য তৈরি করা।
এই গ্রন্থিটি ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীকে ঘিরে থাকে, যা প্রস্রাব এবং বীর্য দেহের বাইরে বহন করে।
প্রোস্টেটের সমস্যাগুলো কী কী?
পুরুষদের মধ্যে প্রোস্টেট সংক্রান্ত প্রধান দুটি সমস্যা হলো—প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া (Benign Prostatic Hyperplasia বা BPH) এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার।
প্রোস্টেট বড় হয়ে যাওয়া (BPH):
বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হওয়ার একটি প্রবণতা দেখা যায়। এর কারণ হলো হরমোনের পরিবর্তন। অনেক পুরুষের ক্ষেত্রেই এর কোনো লক্ষণ দেখা যায় না, তবে কারো কারো ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সমস্যা হতে পারে।
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, বিশেষ করে রাতে।
- প্রস্রাব করতে বেশি সময় লাগা।
- প্রস্রাব সম্পূর্ণ না হওয়ার অনুভূতি।
প্রোস্টেট ক্যান্সার:
প্রোস্টেট ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ। সাধারণত, এটি বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। যদি কোনো পুরুষের পরিবারে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তাহলে তাঁর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে বংশগত কারণেও এই রোগ হতে পারে।
লক্ষণগুলো কী?
প্রোস্টেট ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা প্রোস্টেট বড় হয়ে যাওয়ার মতোই।
যেমন—প্রস্রাব করতে কষ্ট হওয়া, প্রস্রাবের বেগ অনুভব করা, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি।
চিকিৎসা পদ্ধতি:
প্রোস্টেট বড় হয়ে গেলে, জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এবং ওষুধের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা যায়।
- অতিরিক্ত তরল পান করা এড়িয়ে চলা, বিশেষ করে রাতে।
- চা, কফি ও অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় কম পান করা।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা।
প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসাও বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। ক্যান্সারের ধরন ও স্টেজের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্বাচন করা হয়।
- অপারেশন বা শল্য চিকিৎসা।
- বিকিরণ বা রেডিওথেরাপি।
- হরমোন থেরাপি।
করণীয় কী?
আপনার যদি প্রস্রাবের কোনো সমস্যা হয়, তবে দেরি না করে দ্রুত একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। প্রোস্টেট ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে, চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো ফল পাওয়া যায়।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন প্রোস্টেট সহ অন্যান্য রোগ থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া, প্রোস্টেট স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং কোনো সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক