পুরুষের স্তন থেকে এলিয়েন রূপ! ফ্যাশনে প্রস্থেটিক্সের চমক!

পোশাকের জগতে নতুন ধারা: সৌন্দর্য আর পরিবর্তনের খেলা।

ফ্যাশন সবসময়ই পরিবর্তনের একটি খেলা। নতুন নতুন ধারণা, শৈলী আর পরিবর্তনের ছোঁয়া ফ্যাশনকে করে তোলে আকর্ষণীয়। আর এই পরিবর্তনের হাওয়ায় এবার যুক্ত হয়েছে প্রস্থেটিকস বা কৃত্রিম অঙ্গের ব্যবহার।

শুধু চিকিৎসা বিজ্ঞান কিংবা চলচ্চিত্রের জগৎ নয়, ফ্যাশন দুনিয়াতেও এখন প্রস্থেটিকসের জয়জয়কার।

প্যারিস ফ্যাশন উইকের মঞ্চে ডাচ ডিজাইনার ডুরান ল্যাঙ্কটিংকের ডিজাইন করা পোশাকের সাথে মডেলদের শরীরে দেখা গেছে প্রস্থেটিকসের কারুকার্য। কোথাও মডেলের সিক্স প্যাক অ্যাব্‌স (six pack abs) তৈরি করা হয়েছে, আবার কোথাও পুরুষ মডেলকে দেখা গেছে স্তন পরিহিত অবস্থায়।

এই অভিনবত্ব ফ্যাশন বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, এটি কি লিঙ্গ-নিরপেক্ষতার উদযাপন, নাকি নারীত্বের প্রতি বিদ্রূপ? ল্যাঙ্কটিংকের মতে, মানুষের শরীরকে পুতুলের মতো করে দেখার ধারণা থেকেই এই ডিজাইনগুলোর জন্ম।

প্রস্থেটিকসের ব্যবহার ফ্যাশন জগতে নতুন নয়। বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ড যেমন মার্টিন রোজ, কলিনা স্ট্রাডা এবং বালেন্সিয়াগা তাদের সংগ্রহে রূপান্তর এবং পরিচয়ের ধারণা ফুটিয়ে তুলতে প্রস্থেটিকস ব্যবহার করেছে।

এমনকি কিম কার্দাশিয়ানের নিতম্বের আদলে তৈরি করা প্রস্থেটিকসও (prosthetics) দেখা গেছে।

লন্ডন কলেজ অফ ফ্যাশনের শিক্ষক তানিয়া নুরের মতে, “প্রস্থেটিকস সৌন্দর্য বিষয়ক ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং পরিবর্তনের বিষয়টি তুলে ধরে। এটি একটি বৃহত্তর সাংস্কৃতিক আখ্যান তৈরি করে।”

প্রাচীনকালে, হাঁটাচলার সুবিধার জন্য পায়ে কৃত্রিম অঙ্গ ব্যবহার করা হতো। সময়ের সাথে সাথে, বিশেষ করে চলচ্চিত্রের জগতে প্রস্থেটিকসের ব্যবহার বাড়ে।

হলিউডে (Hollywood) বিভিন্ন সিনেমায় (movie) অভিনেতা-অভিনেত্রীদের (actor-actress) ভিন্ন রূপ দিতে প্রস্থেটিকসের জুড়ি মেলা ভার।

বর্তমানে, প্রস্থেটিকসের ব্যবহার আরও উন্নত হয়েছে। ২০২৩ সালের মেট গালা অনুষ্ঠানে (Met Gala) গায়ক ডজা ক্যাটকে (Doja Cat) কার্ল লেজারফেল্ডের (Karl Lagerfeld) প্রিয় বিড়ালের রূপে দেখা গিয়েছিল, যেখানে প্রস্থেটিকসের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো।

এছাড়া, সাবরিনা কার্পেন্টারের (Sabrina Carpenter) মিউজিক ভিডিও (music video) কিংবা এসজার (SZA) এলবামের (album) কভারেও প্রস্থেটিকসের ব্যবহার হয়েছে।

ফ্যাশন ডিজাইনাররা (fashion designer) এখন সৌন্দর্য এবং ফ্যাশনের চিরাচরিত ধারণাকে ভেঙে নতুন কিছু করার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ শরীরের গঠন পরিবর্তন করতে প্রস্থেটিকস ব্যবহার করছেন, আবার কেউ লিঙ্গবৈষম্যকে (gender discrimination) চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন।

তবে, প্রস্থেটিকসের এই ব্যবহার কি শুধুই ফ্যাশন? নাকি এর অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে? কিছু ফ্যাশন সমালোচকের মতে, এটি বর্তমান সময়ের সৌন্দর্য সচেতনতা এবং প্লাস্টিক সার্জারির (plastic surgery) প্রতিচ্ছবি।

আবার কেউ কেউ মনে করেন, এটি নিছকই শিল্পের প্রকাশ।

ফ্যাশন সবসময়ই পরিবর্তনের পথে হেঁটেছে। প্রস্থেটিকসের ব্যবহার সেই পরিবর্তনেরই একটি অংশ। ভবিষ্যতে হয়তো, পোশাকের চেয়ে শরীরের পরিবর্তনেও ফ্যাশন আরও বেশি মনোযোগ দেবে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *