যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি: প্রতিবাদে চাকরি ছাড়ার পরও সম্মাননা।
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ দেওয়া হয় ‘সার্ভিস টু আমেরিকা মেডেলস’ (Sammies)। সম্প্রতি এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এমন একজনের নাম ঘোষণা করা হয় যিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। খবরটি নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্মপরিবেশে অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়।
পুরস্কার পাওয়া ডেভিড লেব্রিক ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। তবে তিনি সরকারের নীতিমালার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে পদত্যাগ করেন। সাবেক ট্রেজারি সচিব টিমোথি গাইথন বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে মানুষ তার অর্জনের মাধ্যমে পরিচিত হয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে পরিচিত হয় কী না করার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।’ লেব্রিক ১৯৮৮ সালে রিগান প্রশাসনের সময় ইন্টার্ন হিসেবে সরকারি চাকরি শুরু করেন। তিনি ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান উভয় দলের অধীনেই দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিরোধের জের ধরে লেব্রিক এই বছর পদত্যাগ করেন। কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁরা ইউএসএআইডি-র (USAID) অর্থায়ন বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তিনি চাকরি ছাড়েন। এটি ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি নিয়ম ভাঙার প্রথম দিকের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর একটি।
অনুষ্ঠানে ‘পার্টনারশিপ ফর পাবলিক সার্ভিস’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাক্স স্টিয়ার বলেন, ‘ফেডারেল সংস্থায় নির্বিচারে কাটছাঁট, কর্মী ছাঁটাই এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও বরখাস্তকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কার্যকারিতা নষ্ট করছে এবং গণতন্ত্রের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।’
অনুষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের কাছে নবনির্মিত হপকিন্স ব্লুমবার্গ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রশাসনের কোনো রাজনৈতিক নেতাকে দেখা যায়নি। এমনকি পুরস্কার গ্রহণকালে অন্য অনেক বিজয়ীর মতো লেব্রিকও মঞ্চে উপস্থিত হননি। কর্তৃপক্ষের এমন নীরবতা বুঝিয়ে দেয়, পুরস্কার প্রদানটাও অনেক সরকারি কর্মীর জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
লেব্রিককে এমন একজন অরাজনৈতিক কর্মকর্তা হিসেবে সম্মানিত করা হয়, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারকে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে সহায়তা করেছেন। পুরস্কার গ্রহণকালে তিনি ট্রেজারি সেক্রেটারি স্টিভেন মুনচিনের সঙ্গে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় কীভাবে তাঁরা অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছিলেন, সেই গল্পও শোনান।
অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরা হয়। ক্যাসান্দ্রা কার্শ ইউএসএআইডি-র মাধ্যমে ইউক্রেনে বিদ্যুতের গ্রিড রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করার জন্য সম্মানিত হন। ড. লরা চিভারকে এইডস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়াও, জাতীয় আবহাওয়া বিভাগের বিজ্ঞানীরা একটি অত্যাধুনিক তাপ সতর্কতা ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য সম্মানিত হন।
অন্যদিকে, সরকারি পরিষেবা উন্নত করার জন্য লুইস করোনাডো জুনিয়র ও ম্যাট পিয়ার্সকে স্টেট ডিপার্টমেন্টে অনলাইন পাসপোর্ট নবায়ন ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া, মায়া ব্রেটিয়াস আইআরএস কল সেন্টার উন্নত করা এবং অপেক্ষার সময় কমানোর জন্য সম্মানিত হন। মেডিকেয়ারের জন্য ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দাম নিয়ে দর কষাকষি করার জন্য স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের কর্মকর্তাদেরও পুরস্কৃত করা হয়।
ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশাসনের (Small Business Administration) কর্মকর্তাদের কোভিড-১৯-এর সময় নেওয়া ঋণ সংক্রান্ত জালিয়াতি শনাক্ত করার জন্য সম্মানিত করা হয়।
কৃষি গবেষণা বিভাগের সুসান জু অগ্নিনির্বাপকদের জন্য উন্নত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম তৈরি করেছেন। এছাড়া, ইয়াকভ প্যাচেপস্কি ও মুন কিম খাদ্য উৎপাদন খামারে খাদ্যজনিত অসুস্থতা শনাক্তকরণের প্রযুক্তি তৈরি করেছেন। কাইল ক্নিপার ক্যালিফোর্নিয়ার কৃষকদের জন্য সেচের পানির ব্যবহার কমানোর জন্য কাজ করছেন।
অনুষ্ঠানে পরমাণু নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার তৈরি, স্যাটেলাইট নির্মাণ, আফ্রিকান সোয়াইন ফ্লু মোকাবিলা এবং অপরাধীদের বিচারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করা হয়।
‘পার্টনারশিপ ফর পাবলিক সার্ভিস’ একটি অরাজনৈতিক সংস্থা। তারা সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করে। তবে অনুষ্ঠানে রিপাবলিকান দলের মাত্র দুজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ জশুয়া বোল্টেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকলেও একটি ভিডিও বার্তা পাঠান। বুশ প্রশাসনের সময় নাসা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শন ও’কিফ উদ্ভাবনী কাজের জন্য সম্মানিত কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা সরকারি কর্মকর্তাদের অবদানের গুরুত্ব তুলে ধরেন। ম্যাক্স স্টিয়ার বলেন, ‘আমাদের সম্মানিত ব্যক্তিরা সরকারি কর্মকর্তাদের অবদানের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁদের কাজগুলো প্রমাণ করে, সরকারি কর্মচারীদের প্রতি যদি এই ধরনের আচরণ চলতে থাকে, তাহলে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হব।’
তথ্য সূত্র: সিএনএন