খাবার ভালোবাসেন? আপনার পরবর্তী গন্তব্য হোক পুয়ের্তো রিকো!

পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম সুন্দর একটি দ্বীপ হলো পুয়ের্তো রিকো। যারা খাদ্যরসিক, তাদের জন্য এই জায়গাটি যেন এক স্বর্গরাজ্য। এখানকার খাবার, সংস্কৃতি আর ইতিহাসের এক দারুণ মিশ্রণ, যা ভ্রমণকারীদের মন জয় করে।

আসুন, আজ আমরা পুয়ের্তো রিকোর কিছু অসাধারণ খাদ্য অভিজ্ঞতার কথা জানি।

পুয়ের্তো রিকোর খাদ্য তালিকার প্রধান আকর্ষণ হলো ‘মোফঙ্গো’। এটি মূলত ভাজা কাঁচকলা দিয়ে তৈরি করা হয়। এই কাঁচকলাগুলোকে মশলার সাথে মিশিয়ে ভর্তার মতো করা হয়।

পুরনো সান জুয়ানে অবস্থিত ‘এল প্যাটিও দে স্যাম’ নামক রেস্টুরেন্টে গেলে এই মোফঙ্গো বানানোর অভিজ্ঞতা উপভোগ করা যেতে পারে। রেস্টুরেন্টের বাবুর্চিরা এখানে আগতদের সামনেই এই বিশেষ পদটি তৈরি করেন।

মোফঙ্গো তৈরিতে তাইনো আদিবাসীদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি স্পষ্ট ছাপ পাওয়া যায়। কাঁচকলা বাদেও, এই পদে মাংস, রসুন এবং বিভিন্ন ধরনের মশলার ব্যবহার করা হয়, যা এর স্বাদকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

খাবার নিয়ে যারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য পুয়ের্তো রিকোর একটি বিশেষ আকর্ষণ হলো ফুল দিয়ে তৈরি খাবার। মানাটিতে অবস্থিত ‘ফ্রুটোস দেল গুয়াকাবো’ নামক একটি খামারে গেলে এই অভিজ্ঞতার সাক্ষী হওয়া যায়।

এখানকার মালিক এফ্রেন ডেভিড রোবলেস বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফল উৎপাদন করেন। এদের মধ্যে ‘লেমন ড্রপ’ নামক এক প্রকার ফুল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এটি মুখে দিলে কিছুক্ষণ পর অবশ হয়ে যায় এবং হালকা টক স্বাদ পাওয়া যায়। এছাড়াও এখানে নানান ধরনের সবজি ও ফল পাওয়া যায়, যা রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়।

হারিকেন মারিয়ার কারণে এখানকার কৃষকরা স্থানীয় খাবার উৎপাদনের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিয়েছেন।

কফির জন্য পুয়ের্তো রিকোর খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। ‘হাসিয়েন্ডা ট্রেস অ্যাঞ্জেলিস’ নামের একটি কফি খামার এখানকার অন্যতম আকর্ষণ।

এটি রাজধানী থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা দূরে অবস্থিত। এখানকার কফি চাষের পদ্ধতি খুবই উন্নত এবং তারা বিভিন্ন প্রকার কফি বিন উৎপাদন করে।

বিশেষ করে ক্যাটুরা বিন (Caturra beans) থেকে তৈরি কফি-এর স্বাদ অসাধারণ। খামারের মালিক নাওমি গোমেজ রোবলেস ও তার স্বামী হুয়ান মেলেনদেজ মুলারো এই খামার তৈরি করেছেন, যেখানে তারা কফি চাষের মাধ্যমে স্থানীয় সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

যারা সমুদ্র উপকূলের খাবার পছন্দ করেন, তাদের জন্য লোইজা-তে অবস্থিত ‘এল বুরেন দে লুলা’ একটি আদর্শ জায়গা। এখানে গেলে ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের খাবার উপভোগ করা যায়, যেমন আরেপাস, এম্পানাদাস দে জুয়েয়েস, এবং মিষ্টি টরটিলাস।

এখানকার পরিবেশ খুবই শান্ত এবং খাবারের স্বাদ অতুলনীয়। লুলা নামের এক প্রবীণা নারী এই রেস্টুরেন্টটি চালান এবং তিনি তার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া রেসিপি অনুসরণ করে খাবার তৈরি করেন।

পুয়ের্তো রিকোর খাদ্য সংস্কৃতি, সেখানকার ইতিহাস আর প্রকৃতির এক দারুণ সমন্বয়। এখানকার প্রতিটি পদের পেছনে লুকিয়ে আছে এক একটি গল্প, যা এই স্থানটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

যারা নতুন কিছু স্বাদ নিতে চান, তাদের জন্য পুয়ের্তো রিকো একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *