মদ থেকে মুক্তি! কিভাবে এক পাঙ্ক ব্যান্ডের গানে বদলে গেল জীবন?

শিরোনাম: মাদক থেকে মুক্তি: এক পাঙ্ক ব্যান্ডের অনুপ্রেরণায় জীবন বদলানো।

ছেলেবেলাটা কাটে স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিনে। বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর উপায় ছিল একটাই, আর তা হলো একসঙ্গে মদ্যপান করা। ১৪ বছর বয়সে যখন জীবনের এই পথে হাঁটা শুরু, তখনো হয়তো ভালো করে বুঝিনি এর বিপদ।

আশেপাশে খেলাধুলা বা অন্য কোনো গঠনমূলক কাজের সুযোগ সেভাবে ছিল না। সবার সঙ্গেই যেন মদ্যপানের একটা অভ্যেস তৈরি হয়ে গিয়েছিল। অল্প বয়সে দ্রুত মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরতে হতো, যাতে বাবা-মায়ের চোখে না পড়ি।

আনন্দের চেয়েও যেন এটা ছিল একটা সামাজিক চাপ।

একদিন, ১৬ বছর বয়সে, পরিচিত হলাম ‘মাইনর থ্রেট’ নামের একটি হার্ডকোর পাঙ্ক ব্যান্ডের সঙ্গে। তাদের প্রধান শিল্পী ইয়ান ম্যাকায়ে ছিলেন আমার কাছে এক অনুপ্রেরণা। তিনি সঙ্গীতের প্রতি নিজস্ব একটা দৃষ্টিভঙ্গি রাখতেন এবং ছিলেন আত্মনির্ভরশীল।

আমি তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে চুল ছেঁটে ফেললাম, মাথায় টুপি পরতে শুরু করলাম। আমার এক বন্ধু তো আমাকে ‘বাইন ম্যাকায়ে’ বলেই ডাকতে শুরু করলো।

মাইনর থ্রেট ১৯৮০-এর দশকে ‘স্ট্রেট এজ’ আন্দোলনের অংশ ছিল। ‘স্ট্রেট এজ’ হলো পাঙ্ক সংস্কৃতির একটি অংশ, যেখানে মাদক ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকার কথা বলা হয়। তারা মনে করে, মাদক ও মদ্যপান সুস্থ জীবনের পরিপন্থী।

মাইনর থ্রেটের ‘আউট অফ স্টেপ’ (Out of Step) গানটি আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গিয়েছিল। গানের কথায় ইয়ান ম্যাকায়ে ‘আই ডোন্ট ড্রিঙ্ক’ (I don’t drink) কথাটিকে সংক্ষেপে ‘ডোন্ট ড্রিঙ্ক’ (don’t drink) বলতেন। যেন তিনি সবাইকে একই কাজ করতে বলছেন।

আমার কাছে, এটা ছিল সমাজের প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার এক নতুন পথ।

আমি হয়তো খুব একটা বিদ্রোহী ছিলাম না, শিক্ষকের সঙ্গে তর্ক বা বাবা-মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার—এমন কিছু করিনি। তাই ‘স্ট্রেট এজ’-এর ধারণা, অর্থাৎ মাদক ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকার বিষয়টি আমার কাছে ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়।

প্রথমে, এটা ছিল নিছক একটা পরীক্ষা। পরে, এটা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। সময়ের সাথে সাথে, আমি এর ভালো দিকগুলো অনুভব করতে শুরু করি।

জীবনের কঠিন সময়ে, শোকের মুহূর্তে কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়, সেই বিষয়ে আমি আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম—মদ্যপান কোনো সমাধান নয়। এছাড়া, সমাজের সঙ্গে মিশতে বা নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলতে আমার দ্বিধা হতো না।

বন্ধুদের মধ্যে আমি ছিলাম কিছুটা আলাদা। তারা হয়তো আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত, কিন্তু আমার বন্ধুদের সার্কেল থেকে আমি কখনো বাদ পড়িনি। ২০০৩ সালের দিকে যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, তখন এক বন্ধু আমাকে বলেছিল, “মদ খাওয়ার ইচ্ছা না থাকলে পাব-এ যাওয়ার দরকার কি?”

অনেকেই জানতে চাইত, আমি কি ধার্মিক নাকি আমার পরিবারে মদ্যপানের সমস্যা আছে। তাদের ধারণা ছিল, এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। কিন্তু আমার কাছে এটা ছিল একটা পছন্দের বিষয়, যা আমাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে তুলেছিল। এরপর থেকে আমি আর কোনো দিন মদ্যপান করিনি।

সচেতনভাবে মদ্যপান ত্যাগ করার ফলে আমার জীবনটা অন্যরকম হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি বিদেশি ছাত্রদের সঙ্গে মিশতাম, যারা আমার চেয়ে কিছুটা বড় ছিল। তাদের সামাজিক জীবনে মদ্যপান স্বাভাবিক বিষয় ছিল, তবে তাদের রুচি ছিল মার্জিত।

সেই বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন আমার স্ত্রী। বর্তমানে আমি ফিনল্যান্ডে বসবাস করি এবং সেখানে একটি ল্যাব টেকনিশিয়ানের কাজ করি। ফিনল্যান্ডে ‘স্ট্রেট এজ’ জীবনধারা বেশ পরিচিত, যা মাদক ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকার একটি উপায়।

তবে, এই ধারণার উৎস যে ১৯৮০-এর দশকের একটি হার্ডকোর পাঙ্ক ব্যান্ড, তা হয়তো অনেকেরই অজানা।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *