সমাজকে বুড়ো আঙুল! পাঙ্ক যুগে এক কিশোরীর বিস্ফোরক ডায়েরি!

## আমেরিকার এক কিশোরীর চোখে ১৯৭০-এর দশকের পাঙ্ক: এক ভিন্ন স্বাদের ডায়েরি

পাঙ্ক রক সঙ্গীতের উন্মাদনা, বিদ্রোহের আগুন, আর সমাজের প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদ – সত্তরের দশকে এর সাক্ষী ছিল সারা বিশ্ব। সেই সময়ের এক ঝলমলে চিত্র পাওয়া যায় অ্যাঞ্জেলা জেগার নামের এক কিশোরীর ডায়েরিতে।

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তার ডায়েরি, যার নাম ‘আই ফিল ফেমাস: পাঙ্ক ডায়েরিজ় ১৯৭৭-১৯৮১’। এই ডায়েরিতে নিউ ইয়র্ক ও লন্ডনের পাঙ্ক দৃশ্যের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে, যা সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

অ্যাঞ্জেলার বেড়ে ওঠা নিউ ইয়র্কের ইস্ট ভিলেজে। সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা ছিল তার ছোটবেলা থেকেই। ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে সোচ্চার একটি উদারপন্থী পরিবারে বেড়ে ওঠা অ্যাঞ্জেলা অল্প বয়সেই আকৃষ্ট হন সমাজের প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে যাওয়া কিছু মানুষের প্রতি।

তার বাড়ির কাছেই ছিল বিখ্যাত ক্লাব ‘সিবিজিবি’স’। সেখানে তিনি নিয়মিত যেতেন, যেখানে পারফর্ম করতেন টকিং হেডস, ব্লন্ডি’র মতো ব্যান্ড দলগুলো। বন্ধুদের আগ্রহ না থাকলেও অ্যাঞ্জেলা একাই যেতেন, কারণ সঙ্গীতের প্রতি তার ছিল গভীর টান।

মাত্র সতেরো বছর বয়সে অ্যাঞ্জেলার মধ্যে সাংবাদিকতার একটি সহজাত প্রবৃত্তি তৈরি হয়। তিনি সব কিছু নথিভুক্ত করতে চাইতেন। কনসার্টে গিয়ে টেপ রেকর্ডার হাতে ব্যান্ডের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিতেন।

একবার তিনি ‘দ্য ক্র্যাম্পস’ ব্যান্ডের সদস্য লুক্স ইন্টেরিয়রের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন, তার প্রিয় ‘টেক্সচার’ হলো চামড়া।

ব্রিটিশ সঙ্গীত বিষয়ক পত্রিকা ‘এনএমই’ এবং ‘সাউন্ডস’ থেকে তিনি পাঙ্ক সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন। জনি রটেন-এর ছবি দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন। পোশাক, আচরণ, সবকিছুই ছিল ভিন্ন।

নিউ ইয়র্কের থেকে লন্ডনের সংস্কৃতি ছিল আলাদা। বাইকার, চামড়ার পোশাক পরা মানুষজন, কালো জিন্স—এসবই ছিল সেই সময়ের ফ্যাশন।

‘আই ফিল ফেমাস’ ডায়েরিতে অ্যাঞ্জেলার একজন দর্শক থেকে পাঙ্ক আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হয়ে ওঠার গল্প লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তিনি লিডিয়া লাঞ্চের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন এবং ১৯৭৮ সালের শরৎকালে লন্ডনে পাড়ি জমান।

সেখানে তিনি নিউ ইয়র্ক ডলস-এর ডেভিড জোহানসেন, জনি রটেন এবং প্যাটি স্মিথের মতো ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সময় কাটান। ক্ল্যাশ ব্যান্ডের ইউকে ট্যুরেও তিনি যোগ দিয়েছিলেন।

জো স্ট্রামার এবং বিলি আইডল তাকে চুমু খেয়েছিলেন। ‘স্লিটস’ ব্যান্ডের সদস্য আরি আপ এবং ভিভ অ্যালবার্টিনের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়।

ডায়েরিতে অ্যাঞ্জেলার এক বিদ্রোহী কিশোরী থেকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার কাহিনি ফুটে উঠেছে। তিনি লিখেছেন, “আমি বসে আছি, আমার মস্তিস্কে কোকো, গভীর রাতে হেঁটে বেড়াচ্ছি। সম্ভবত এখন লন্ডনেও বৃষ্টি হচ্ছে, যেমনটা নিউ ইয়র্কে হয়।

পাঙ্ক-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের মূলধারার সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসে। ১৯৭৮ সালের ১৯ অক্টোবর ‘টপ অফ দ্য পপস’-এ বাজককস, শেম ৬৯, দ্য জ্যাম এবং পিআইএল-এর মতো ব্যান্ডের পারফর্মেন্স দেখে অ্যাঞ্জেলা বিস্মিত হয়েছিলেন।

১৯৭৯ সাল নাগাদ তিনি দ্য স্পেশালস, ম্যাডনেস, জয় ডিভিশন, টিউবওয়ে আর্মি-র মতো ব্যান্ডগুলিকে ভালোবাসতে শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি ‘পিগব্যাগ’ নামে একটি জ্যাজ-পপ ব্যান্ডে যোগ দেন।

তবে, সেই সময়ের সমাজে মাদক, চামড়া মাথায় দেওয়া একদল যুবকের দ্বারা সহিংসতা, এমনকী ছুরিকাঘাতের মতো ঘটনাও ঘটত। অ্যাঞ্জেলা জানিয়েছেন, সেই সময়ে তরুণীদের দিকে অনেকের কুনজর ছিল, কিন্তু তিনি সবসময় সতর্ক ছিলেন।

তিনি মনে করেন, পাঙ্ক ছিল তার জন্য একটি আশ্রয়স্থল, যা তাকে শিল্পী, লেখক এবং সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবে জীবন কাটাতে সাহায্য করেছে।

অ্যাঞ্জেলার মতে, পাঙ্ক ছিল তার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়ে পাওয়া একটি সুযোগ। আজকের দিনে এমন বিদ্রোহী চরিত্র খুব একটা দেখা যায় না, এমনটা তিনি মনে করেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *