যুক্তরাষ্ট্রের একটি বহুল আলোচিত মাদক সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তির জন্য ৭.৪ বিলিয়ন ডলারের নতুন দেউলিয়া প্রস্তাব পেশ করেছে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান পারডু ফার্মা। মঙ্গলবার (গতকাল) নিউ ইয়র্কের হোয়াইট প্লেইনস-এ এই প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, এই অর্থ প্রদানের মূল লক্ষ্য হলো কোম্পানিটির ব্যথানাশক ওষুধ ‘অক্সিcontin’-এর কারণে যুক্তরাষ্ট্রে যে ভয়াবহ মাদকাসক্তি সংকট তৈরি হয়েছে, সেই সংক্রান্ত হাজারো মামলার সমাধান করা।
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কিভাবে রাজ্য সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং মাদকাসক্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। যদিও এই চুক্তির চূড়ান্ত রূপ দিতে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে, কারণ এর আগে সুপ্রিম কোর্টের বাধার সম্মুখীন হয়েছিল পারডু ফার্মা।
গত বছর আদালত তাদের আগের প্রস্তাব নাকচ করে দেয়, যেখানে কোম্পানিটির মালিক ধনী স্যাকলার পরিবারকে মামলার দায় থেকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল।
পারডু ফার্মার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই পরিকল্পনায় পাওনাদারদের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে তারা কাজ করছে। আগামী মে মাস থেকে পাওনাদারদের কাছ থেকে ভোট চাওয়া হবে।
এরপর আদালতের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনাটি পেশ করা হবে। কোম্পানির চেয়ারম্যান স্টিভ মিলার জানিয়েছেন, “আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে আমরা এমন একটি সমাধানে পৌঁছেছি, যা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আরও বেশি অর্থ সরবরাহ করবে এবং সমাজের কল্যাণে কাজে লাগবে।”
আদালতের আগের রায়ে বলা হয়েছিল, দেউলিয়া আদালতের ক্ষমতা ব্যবহার করে স্যাকলার পরিবারকে দায়মুক্ত করা যায় না। নতুন পরিকল্পনায় পাওনাদারদের এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে যে, তারা চাইলে এই নিষ্পত্তিতে অংশ নিতে পারবে অথবা স্যাকলার পরিবারের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে মামলা করতে পারবে।
স্যাকলার পরিবার নতুন এই নিষ্পত্তিতে ৬.৫ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়েছে, যা আগের প্রস্তাবের চেয়ে ১ বিলিয়ন ডলার বেশি।
এছাড়াও, পারডু ফার্মা নিজেদের তহবিল থেকে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এবং তারা এমন একটি পাবলিক কোম্পানি হতে যাচ্ছে, যা মাদকাসক্তি নিরাময় এবং অতিরিক্ত মাদক সেবনের প্রতিকারে ওষুধ তৈরি করবে। নতুন পরিকল্পনায়, রাজ্য ও স্থানীয় সরকারগুলো এই অর্থ মাদক সমস্যার সমাধানে কাজে লাগাবে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘অক্সিcontin’-এর কারণে আসক্ত হওয়া ব্যক্তি এবং গর্ভকালীন সময়ে মাদক সেবনের কারণে জন্ম নেওয়া শিশুদের পুনর্বাসন।
যদিও বাংলাদেশে মাদকাসক্তির প্রেক্ষাপট যুক্তরাষ্ট্রের মতো ব্যাপক নয়, তবুও এই খবর দেশের মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং ওষুধ শিল্পের নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। কারণ, এই ধরনের ঘটনা আমাদের দেশেও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ এবং অপব্যবহার রোধে আরও সচেতনতা তৈরি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন