পুরুষদের অন্ধকার জগৎ থেকে ফেরাতে এগিয়ে আসছেন পুরুষরাই!

পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা প্রশিক্ষকদের নতুন দিগন্ত।

পুরুষদের জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বাড়ছে, এবং এর সাথে বাড়ছে তাদের জন্য পরামর্শদাতা বা প্রশিক্ষকদের চাহিদা।

পশ্চিমা বিশ্বে এই ধরনের প্রশিক্ষকদের আবির্ভাব ঘটলেও, এর প্রভাব এখন বিশ্বজুড়ে অনুভূত হচ্ছে।

সম্প্রতি, এমন কিছু প্রশিক্ষকের কথা জানা গেছে যারা পুরুষদের মানসিক শান্তির পথে সাহায্য করছেন।

তবে, এই পরিবর্তনের কারণ এবং এর পেছনের গল্পটা কি, আসুন জেনে নেওয়া যাক।

বেন বিডওয়েল নামের একজন প্রশিক্ষক তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানান, একসময় তিনি “ভেতরে মৃত” অনুভব করতেন।

তিনি বলেন, সমাজের চাপ এবং পুরুষতান্ত্রিক ধ্যানধারণার কারণে অনেক পুরুষ তাদের আবেগ থেকে দূরে চলে যায়।

বিডওয়েলের মতে, এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা এবং মানসিক সমর্থন।

তিনি পুরুষত্ব এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন, এবং পুরুষদের ভালো জীবন ও মানসিক শান্তির প্রতিশ্রুতি দেন।

একই ধরনের অভিজ্ঞতা থেকে আসা ব্রায়ান রিভস নামক আরেকজন প্রশিক্ষকও পুরুষদের সাহায্য করছেন।

তিনি একজন “জীবন ও সম্পর্ক বিষয়ক পরামর্শদাতা”।

রিভসও একসময় ছিলেন সাফল্যের পেছনে ছোটা একজন মানুষ, যিনি পরে উপলব্ধি করেন মানসিক শান্তির গুরুত্ব।

এখন তিনি পুরুষদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করেন।

এই প্রশিক্ষকরা মূলত পুরুষদের সেইসব সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করেন যা তারা সমাজের বিভিন্ন দিক থেকে অনুভব করে।

অনেক সময় পুরুষেরা তাদের দুর্বলতা প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করে।

এক্ষেত্রে, প্রশিক্ষকরা তাদের আবেগ বুঝতে এবং প্রকাশ করতে উৎসাহিত করেন।

তবে, এই পরিবর্তনের পেছনে একটি বড় কারণ হলো, পুরুষদের মধ্যে বন্ধুত্বের অভাব।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, অনেক পুরুষের ঘনিষ্ঠ বন্ধু নেই।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তারা কিছু সমর্থন খুঁজে পায়, কিন্তু বাস্তবে তাদের একাকীত্ব বাড়ে।

এই পরিস্থিতিতে, অনেক পুরুষ ভুল পথে চালিত হতে পারে।

কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পুরুষদের ভুল ধারণা দিয়ে আকর্ষণ করে।

সেখানে নারীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করা হয় এবং পুরুষদের নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে উৎসাহিত করা হয়।

এই ধরনের পরিবেশ পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

এই সমস্যাগুলো সমাধানে প্রশিক্ষকরা পুরুষদের সঠিক পথে আনতে চেষ্টা করেন।

তারা পুরুষদের আত্ম-উন্নয়ন এবং দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেন।

তারা শেখান কিভাবে সুস্থ সম্পর্ক তৈরি করা যায় এবং কীভাবে নিজেদের দুর্বলতাগুলো মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়।

তবে, প্রশিক্ষকদের এই কাজটি সহজ নয়।

কারণ অনেক পুরুষ তাদের দুর্বলতা স্বীকার করতে চান না।

তারা মনে করেন, তাদের কোনো সমস্যা নেই।

প্রশিক্ষকরা তাদের এই মানসিকতা পরিবর্তনে সহায়তা করেন।

যুক্তরাজ্যের ‘এ ব্যান্ড অফ ব্রাদার্স’ নামক একটি সংস্থা তরুণ পুরুষদের জন্য বিনামূল্যে পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করে।

সংস্থাটি তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে উৎসাহিত করে।

তাদের মতে, সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে পুরুষদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সমাজের সকলের সচেতন হওয়া উচিত।

তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা এবং সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন, যাতে তারা একটি সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *