পুরুষদের গোপন জগৎ: একাকীত্ব ঘোচাতে নতুন পথের সন্ধান!

পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষদের আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি, পশ্চিমা বিশ্বে ‘মেন’স সার্কেল’ বা পুরুষদের জন্য সহায়ক গোষ্ঠীর ধারণা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যেখানে পুরুষরা নিজেদের অনুভূতিগুলো একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন।

এই ধরনের গোষ্ঠীর প্রয়োজনীয়তা, কার্যকারিতা এবং এর সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়ে একটি আলোচনা করা হলো।

পুরুষদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের অভাব একটি উদ্বেগের বিষয়। অনেক পুরুষ সামাজিক জীবনে একাকীত্ব অনুভব করেন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

পশ্চিমা সংস্কৃতিতে পুরুষদের ‘পুরুষোচিত’ হতে শেখানো হয়, যেখানে দুর্বলতা প্রকাশ করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। এর ফলস্বরূপ, তারা তাদের সমস্যাগুলো গোপন করতে বাধ্য হন এবং বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়েন।

এই সমস্যার সমাধানে ‘মেন’স সার্কেল’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

‘মেন’স সার্কেল’ হলো পুরুষদের একটি নিয়মিত মিলনস্থল, যেখানে তারা তাদের ব্যক্তিগত জীবন, সম্পর্ক, এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে পারেন। এখানে পুরুষরা একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হন এবং তাদের অভিজ্ঞতাগুলো ভাগ করে নেন।

এই ধরনের গোষ্ঠীর সদস্যরা একে অপরের প্রতি সমর্থন এবং পরামর্শ প্রদান করেন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। এই আলোচনাগুলোতে অংশগ্রহণকারীদের আত্ম-সচেতনতা বাড়ে, আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা হয় এবং সম্পর্কের উন্নতি ঘটে।

যুক্তরাষ্ট্রে, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে ‘মেন’স সার্কেল’-এর ধারণা দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। এই ধরনের গোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন – সম্পর্কের জটিলতা, কর্মজীবনের চ্যালেঞ্জ, অথবা স্বাস্থ্য বিষয়ক উদ্বেগের কথা আলোচনা করেন।

অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকরা এই সভাগুলো পরিচালনা করেন এবং একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করেন, যেখানে পুরুষরা কোনো বিচার বা ভয়ের সম্মুখীন না হয়ে তাদের কথা বলতে পারেন।

তবে, এই ধরনের গোষ্ঠীর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, এই গোষ্ঠীগুলো পুরুষত্বের সনাতন ধারণাগুলোকেই আরও জোরদার করে, যা নারীবিদ্বেষী চিন্তাভাবনার জন্ম দিতে পারে।

এছাড়াও, অল্পবয়সী পুরুষদের মধ্যে এই ধরনের গোষ্ঠীর জনপ্রিয়তা তুলনামূলকভাবে কম। ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা এবং আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে পুরুষদের উৎসাহিত করার জন্য আরো বেশি সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশেও পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের সমাজে পুরুষদের আবেগ প্রকাশে বাধা দেওয়া হয়, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

এখানেও পুরুষদের জন্য সহায়ক গোষ্ঠীর ধারণা তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে পুরুষরা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করতে এবং সহায়তা পেতে পারেন। পরিবার, বন্ধু এবং সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সহজলভ্য করা এবং পুরুষদের মধ্যে তাদের অনুভূতি প্রকাশে উৎসাহিত করার মাধ্যমে আমরা একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে পারি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *