যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন পুতিন, ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা অব্যাহত।
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধের উদ্দেশ্যে ঘোষিত ‘ইস্টার যুদ্ধবিরতি’ কার্যত ভেস্তে গেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলেও, ইউক্রেন তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।
যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জানা যায়, রাশিয়া ইস্টার উপলক্ষ্যে ৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। যদিও ইউক্রেন এই সময়ের মধ্যে অন্তত ৩০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু পুতিন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোমবার এক ভাষণে বলেন, “ইস্টারের সময় কোনো বিমান হামলার সাইরেন শোনা যায়নি এবং ফ্রন্ট লাইনের কিছু অংশে শান্তি ছিল। এটি প্রমাণ করে, যখন রাশিয়া চায়, তখন হত্যা কমানো সম্ভব।”
তবে ইউক্রেন বরাবরই বলে আসছে, এই যুদ্ধের মূল কারণ রাশিয়া এবং তারাই পারে এই সংঘাত বন্ধ করতে।
জেলেনস্কি আরও বলেন, “বাস্তবে, প্রধান ফ্রন্ট-লাইনের দিকে তাকালে, রাশিয়া তাদের যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
অন্যদিকে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রায় ৪,৯০০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে এবং এর মধ্যে ৯০ বার ড্রোন দিয়ে হামলার চেষ্টা করা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির সময় উভয়পক্ষই তাদের সামরিক অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রুশ বাহিনী এই সময়টিকে তাদের সেনাদের একত্রিত করতে এবং অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করতে ব্যবহার করেছে।
পূর্ব ইউক্রেনের লাইমান শহরের কাছে যুদ্ধরত ইউক্রেনের একটি ব্রিগেডের মুখপাত্র আনাস্তাসিয়া ব্লাইশচিক বলেন, “আমরা দেখেছি, তারা কীভাবে তাদের পদাতিক সৈন্যদের অস্ত্রশস্ত্র সহ ফ্রন্ট লাইনে নিয়ে এসেছে। তারা আরপিজি এবং মেশিনগান ব্যবহার করেছে।
তথাকথিত ইস্টার যুদ্ধবিরতির সময় ১২০ জনের বেশি রুশ সেনা জঙ্গলের মধ্যে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনে আশ্রয় নিয়েছিল।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা জোরদার করেছে। প্যারিসে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে নিরাপত্তা গ্যারান্টি এবং সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধের অবসান চান এবং এরই মধ্যে সকল পক্ষের কাছে একটি স্থায়ী শান্তির রূপরেখা পেশ করেছেন।”
অন্যদিকে, ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সুইরিডেনকো জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য একটি অভিপ্রায়পত্রে স্বাক্ষর করেছে, যা উভয় দেশের মানুষের উপকার করবে।
এই চুক্তিতে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ইউক্রেন আরও ঘোষণা করেছে যে তারা সারা দেশে জাতীয় প্রতিরোধ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলবে। যেখানে অভিজ্ঞ সেনারা আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করবে।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান এবং উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা এখনো অনিশ্চিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাতের দ্রুত সমাধানে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা