যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে শান্তি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রহ রয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন বিশেষ দূত। সম্প্রতি রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে পুতিনের সঙ্গে আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এমনটা দাবি করেছেন।
সোমবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে উইটকফ জানান, গত সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে তার ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যদিও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সতর্ক করে বলেছেন, শান্তি চুক্তির শর্তগুলো নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সহজ নয়।
অন্যদিকে, ইউক্রেন এবং তাদের পশ্চিমা মিত্ররা ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে বলেছে, মস্কোর যুদ্ধবিরতি বিষয়ক আলোচনা বিলম্বিত করার কৌশল সম্পর্কে যেন তারা সচেতন থাকে।
উইটকফের এই আশাবাদ ব্যক্ত করার মাঝেও, ইউক্রেনের সুমি শহরে রাশিয়ার চালানো ভয়াবহ হামলার নিন্দা করেছেন অনেকে। এমনকি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিকে ‘ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
আলোচনায় জানা যায়, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাব দিলেও রাশিয়া এখনো কোনো ছাড় দিতে রাজি হয়নি। দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তি ভাঙার অভিযোগ এনেছে।
অন্যদিকে, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শান্তি চুক্তির মূল বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছানো সহজ নয়। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন এই সংঘাতের ‘মূল কারণ’ বোঝার চেষ্টা করছে। তিনি মনে করেন, ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসের কিছু পদক্ষেপের কারণেই ইউক্রেনে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও মনে করেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর জন্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়ী। ট্রাম্প বলেন, ‘এই তিনজনের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে’। তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু করলে, কিভাবে জিততে হয় সেটা জানতে হবে। এমন কারও সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করা উচিত নয়, যে তোমার চেয়ে ২০ গুণ বড়, এবং তারপর কিছু ক্ষেপণাস্ত্র পাওয়ার আশা করা যায় না।’
ট্রাম্প এবং জেলেনস্কির মধ্যে সম্পর্ক বেশ কয়েক মাস ধরেই ভালো যাচ্ছে না। কারণ, গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন ট্রাম্প, যা সমালোচকদের চোখে ক্রেমলিনের কৌশলকে আরও শক্তিশালী করেছে।
ইউক্রেনকে সরাসরি আলোচনার বাইরে রাখা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘দয়া করে, কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, আলোচনার আগে, সাধারণ মানুষ, সেনা সদস্য, হাসপাতাল, চার্চ, শিশুদের ধ্বংসযজ্ঞ দেখুন’।
এদিকে, কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্প এবং তার টিমকে সতর্ক করে বলেছে, যুদ্ধবিরতির আলোচনায় রাশিয়ার কৌশল যেন তারা বুঝতে পারে। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লাভ সিকোরস্কি বলেছেন, সুমিতে হামলার পর ট্রাম্প প্রশাসন বুঝতে পারবে যে পুতিন তাদের thiện намереকে উপহাস করছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা