কাতার : হামাস-বিরোধী অভিযান নিয়ে আরব দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন, মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় কাতার
দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত — গাজায় হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে কাতার। আগামী সপ্তাহে দোহায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই সম্মেলনে ইসরায়েলের আগ্রাসন কিভাবে প্রতিহত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
এতে আরব ও ইসলামি দেশগুলোর প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। খবর অনুযায়ী, হামাসের নেতাদের ওপর ইসরায়েলের এই আক্রমণ এমন এক সময়ে হয়েছে যখন কাতার যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে।
হামাসের ৭ অক্টোবরের ইসরায়েলে চালানো হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় হামাস এবং ইরানের সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ইরান, লেবানন, ফিলিস্তিনি অঞ্চল, সিরিয়া, কাতার ও ইয়েমেনেও হামলা চালানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যা সেখানকার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
অনেকের ধারণা, উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি সম্প্রতি এক বৈঠকে বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরায়েলের দ্বৈত নীতি বন্ধ করতে হবে এবং তাদের অপরাধের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
তবে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকায় সম্মেলনের ফল কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘সউফান সেন্টার’ এর মতে, এই শীর্ষ সম্মেলন তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে এত বড় একটি সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে, যা অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগের গভীরতা প্রকাশ করে।
তাদের মতে, এখন দেখার বিষয় হলো, এই সম্মেলনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় কিনা। এর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং আকাশসীমা ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
ইরানও এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এই সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, গত জুনে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর কাতারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
তেহরান থেকে রওনা হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেন, ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েল কাতার, লেবানন, ইরাক, ইরান ও ইয়েমেনের মতো অনেক মুসলিম দেশের ওপর হামলা চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো ইসরায়েলের এসব কাজের সমর্থন করে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ইরান কাতার এবং সকল মুসলিম ভাই ও বোনের সঙ্গে আছে, বিশেষ করে এই অঞ্চলের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে।’ তবে, ইরান যে কাতারের ওপর হামলা চালিয়েছিল, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের ইতিহাসে কাতার দীর্ঘদিন ধরে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে দীর্ঘদিন ধরে এই কাজটি করে আসছে।
তবে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বেড়ে যাওয়ায় নেতানিয়াহুর সরকারের কট্টরপন্থীরা কাতারের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি কাতারকে সমর্থন করে বলেছেন, ‘তারা আমাদের ভালো মিত্র। অনেক মানুষ কাতার সম্পর্কে জানে না। তারা খুবই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে জীবন যাপন করে, কারণ তারা সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।’
অন্যদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারকো রুবিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কাতারে হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কারণে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজায় নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা অর্ধেকের বেশি।
ইসরায়েলের দাবি, হামাসের হামলায় নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালায়, যাতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে অপহরণ করা হয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস