দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানে ইউরোপে বিজয় দিবস উদযাপনের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্মৃতিচারণা নতুন করে সামনে এসেছে। এই ঐতিহাসিক দিনে, ব্রিটিশ রাজপরিবার ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে এক বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করে।
রানি এলিজাবেথের ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তিনি নিজে এই দিনটির সাক্ষী ছিলেন।
১৯৪৫ সালের ৮ই মে, যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়, তখন এলিজাবেথ ছিলেন মাত্র ১৯ বছরের তরুণী। বিবিসির ১৯৮৫ সালের একটি রেকর্ডিংয়ে তিনি সেই দিনের স্মৃতিচারণ করেন।
তিনি জানান, কীভাবে তিনি এবং তাঁর বোন, প্রিন্সেস মার্গারেট, সাধারণ মানুষের সাথে মিশে লন্ডনের রাস্তায় নেমে এসেছিলেন বিজয় উৎসবের আনন্দে যোগ দিতে। রাজপরিবারের সদস্যরা বাকিংহাম প্যালেসের বারান্দা থেকে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছিলেন, কিন্তু এলিজাবেথ ও মার্গারেট জনতার মাঝে মিশে গিয়ে সরাসরি সেই আনন্দ উপভোগ করতে চেয়েছিলেন।
সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রানি জানান, কীভাবে তারা ছদ্মবেশে বেরিয়েছিলেন, যাতে তাদের কেউ চিনতে না পারে। এমনকি এক সময় এক সামরিক কর্মকর্তার কাছে তিনি ধরাও পড়ে যান, কারণ তিনি তার ইউনিফর্মের টুপি ভালোভাবে পরেননি।
এলিজাবেথ বলেছিলেন, “আমরা রাজা ও রানীর প্রতি সম্মান জানালাম, তারপর মাইলকে মাইল হেঁটে গেলাম। আমি দেখেছি, অচেনা মানুষজন হাত ধরে হোয়াইটহলের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, যেন আনন্দের এক ঢেউয়ে সবাই ভেসে যাচ্ছি।”
রানির মতে, সেই উদযাপন ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় রাতগুলোর মধ্যে একটি। যদিও সেই রাতের কোনো ছবি পাওয়া যায়নি, তবে টেলিভিশন সিরিজ ‘দ্য ক্রাউন’-এর ষষ্ঠ ও শেষ সিজনে সেই রাতের কিছু দৃশ্য পুনরায় চিত্রায়িত করা হয়েছে।
২০২০ সালে, ভে-ডে’র ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে রানি এলিজাবেথ একটি ভাষণ দেন। তিনি বলেছিলেন, “শুরুতে পরিস্থিতি কঠিন ছিল, শেষের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না।
কিন্তু আমরা বিশ্বাস রেখেছিলাম যে আমাদের উদ্দেশ্য সঠিক ছিল। আমার বাবা তাঁর ভাষণে যেমনটা বলেছিলেন, এই বিশ্বাসই আমাদের পথ দেখিয়েছে। হার মানবেন না, হতাশ হবেন না – ভে-ডের এটাই ছিল বার্তা।”
বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে রাজা তৃতীয় চার্লস, কুইন কনসর্ট ক্যামিলা, প্রিন্স উইলিয়াম, কেট মিডলটন এবং অন্যান্য রাজপরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তাঁরা সশস্ত্র বাহিনীর আত্মত্যাগ এবং সাধারণ মানুষের ধৈর্য্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নীরবতা পালন করেন। এই অনুষ্ঠানে সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু প্রবীণও উপস্থিত ছিলেন।
তথ্য সূত্র: পিপল