সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় কুইয়ার ও ট্রান্স হোমস্টিডারদের জয়জয়কার!

বর্তমান ডিজিটাল যুগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের মানুষের জীবনযাত্রা, রুচি, এবং অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটে।

সম্প্রতি, এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে ‘হোমস্টেডিং’ বা স্বনির্ভর জীবন ধারণের ধারণা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই ধারার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন কতিপয় রূপান্তরকামী (transgender) এবং কুইয়ার (queer) ব্যক্তি, যারা প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে গিয়ে নিজেদের জীবন নতুন আঙ্গিকে সাজাচ্ছেন।

হোমস্টেডিং মূলত এমন একটি জীবন ব্যবস্থা যেখানে মানুষজন নিজের খাদ্য উৎপাদন, বাসস্থান তৈরি এবং প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে জীবন ধারণের চেষ্টা করেন। কুইয়ার এবং রূপান্তরকামী ব্যক্তিরা, যারা প্রায়ই সমাজের প্রান্তিক অবস্থানে থাকেন, এই জীবনধারার মাধ্যমে নিজেদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করছেন।

তারা কেবল খাদ্য উৎপাদনই করছেন না, বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের এই জীবনযাত্রা তুলে ধরে অন্যদের অনুপ্রাণিত করছেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন ‘রোডি রুবি’, যিনি একজন ড্রাগ কুইন এবং একইসঙ্গে একজন হোমস্টেডার। তিনি তার ইনস্টাগ্রাম ও টিকটক অ্যাকাউন্টে ৪ লক্ষাধিক অনুসারীর কাছে তার খামার জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন।

ঐতিহ্যগতভাবে, হোমস্টেডিংয়ের ধারণা রক্ষণশীলতার সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু বর্তমানে কুইয়ার এবং রূপান্তরকামী ব্যক্তিদের এই ধারায় অংশগ্রহণের ফলে ধারণাটিতে নতুনত্ব যোগ হয়েছে। তারা প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার পাশাপাশি নিজেদের জীবন ও সমাজের চিরাচরিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন।

তাদের মতে, কঠোর পরিশ্রম এবং প্রকৃতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়াটা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে জড়িত নয়।

উদাহরণস্বরূপ, ওয়াশিংটন স্টেটের ‘এভারগ্রিন’ দম্পতি তাদের হোমস্টেডকে একটি নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত করতে চান, যেখানে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের সদস্যরা একত্রিত হতে পারবে। তারা একটি ‘ভোজ্য বন’ তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে সকলে ফল ও সবজি উৎপাদন করতে পারবে।

তবে, এই পথ সবসময় সহজ ছিল না। অনেকে তাদের প্রতি বিরূপ মন্তব্য করেছেন, কারণ তারা প্রচলিত ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নন। কিন্তু তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, কারণ তাদের লক্ষ্য হলো একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ তৈরি করা এবং প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করা।

হোমস্টেডিং এখন আর কেবল খাদ্য উৎপাদন বা স্বনির্ভরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের স্থান খুঁজে নিচ্ছে এবং অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা তৈরি করছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *