বিয়ে-আংটি বাছাই থেকে শুরু করে বিয়ের প্রস্তাব— আজকাল যেন সবকিছুতেই ভিন্নতা। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাড়ছে ‘নিরব প্রস্তাব’-এর চল, যেখানে হইচই বা লোক দেখানোর পরিবর্তে অন্তরঙ্গতা এবং যুগলের ব্যক্তিগত ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
পশ্চিমা বিশ্বে, বিশেষ করে জেনারেশন জি (১৩-২৮ বছর বয়স) প্রজন্মের মধ্যে এই প্রবণতা বাড়ছে, যেখানে বাগদানের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে আংটি নির্বাচন— সবকিছুতেই যুগলের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সাধারণত, এই ধরনের ‘নিরব প্রস্তাব’-এর মূল ধারণা হলো, চিৎকার-চেঁচামেচি বা বিশাল আয়োজনের বদলে একান্ত ব্যক্তিগত পরিসরে, ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে আলোচনা করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া। অনেক যুগল এখন নিজেরাই আংটি বাছাই করেন, যেন আংটিটি তাঁদের দু’জনের ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি হয়।
সম্প্রতি, ডায়মন্ড ফ্যাক্টরি জুয়েলার্সের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, এখন অর্ধেকের বেশি ক্রেতা তাঁদের সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে বিয়ের আংটি কিনতে যান। এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ের সমান অধিকার এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আগে যেখানে বিরাট আয়োজনে, সবার সামনে হাঁটু গেড়ে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার প্রবণতা ছিল, সেখানে এখন যুগলরা বিয়ের ব্যাপারে আগে থেকেই আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এই ধরনের ‘নিরব প্রস্তাব’-এর ধারণা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে।
এমন প্রস্তাবনার ফলে সম্পর্কে আরও বেশি গভীরতা আসে এবং একে অপরের প্রতি বোঝাপড়া বাড়ে।
তবে, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি ভিন্ন। বাংলাদেশে বিয়ে একটি সামাজিক এবং পারিবারিক বিষয়, যেখানে পরিবারের সম্মতি ও আশীর্বাদ অপরিহার্য। ‘নিরব প্রস্তাব’-এর ধারণা যুগলের ব্যক্তিগত পছন্দকে গুরুত্ব দিলেও, এখানে পরিবারের ভূমিকাকেও অস্বীকার করা যায় না।
বরং, এই ধরনের প্রস্তাবনার মাধ্যমে যুগল তাঁদের ভবিষ্যৎ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো একসঙ্গে নিতে পারেন, যা তাঁদের সম্পর্কের ভিত আরও মজবুত করবে। একইসঙ্গে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলে তা সামাজিক সম্পর্ককেও সুসংহত করে।
বর্তমানে, বিয়ের প্রস্তাবনার ধরনে পরিবর্তন আসলেও, ভালোবাসার গভীরতা এবং সম্পর্কের সম্মান সবসময় একইরকম থাকে। ‘নিরব প্রস্তাব’-এর ধারণা হয়তো আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে নতুন একটি মাত্রা যোগ করতে পারে, যেখানে যুগল তাঁদের ব্যক্তিগত পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে, পরিবারের সম্মতিতে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ জীবনের সূচনা করতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian