রিভসের কোপ: জনস্বাস্থ্যে কাটছাঁট, বাড়ছে দুর্ভোগ!

যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র‍্যাচেল রিভস সম্প্রতি দেশটির অর্থনীতির ভবিষ্যৎ রূপরেখা তুলে ধরেছেন, যা ‘স্প্রিং স্টেটমেন্ট’ নামে পরিচিত। এই ঘোষণায় একদিকে যেমন জনকল্যাণ ও সরকারি সেবার খাতে বড় ধরনের কাটছাঁটের কথা বলা হয়েছে, তেমনই দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এই পদক্ষেপগুলোর মূল লক্ষ্য হলো সরকারি ঋণের বোঝা কমানো এবং দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।

রিভসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা পরিস্থিতি এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে দায়ী করা হচ্ছে।

তবে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় ৪.১ বিলিয়ন পাউন্ডের বাজেট ঘাটতি ৯.৯ বিলিয়ন পাউন্ডের উদ্বৃত্তে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় খাতে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অবকাঠামো উন্নয়নকে আরও গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিশেষ করে, প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা হবে এবং দীর্ঘমেয়াদী অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো হবে।

এই পদক্ষেপগুলো দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে, এই বাজেট ঘোষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো জনকল্যাণ খাতে কাটছাঁট। সমালোচকরা বলছেন, এর ফলে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

সরকার অবশ্য জানাচ্ছে, তারা ইউনিভার্সাল ক্রেডিট-এর (ইউনিভার্সাল ক্রেডিট হলো যুক্তরাজ্যের একটি সামাজিক নিরাপত্তা প্রোগ্রাম) স্ট্যান্ডার্ড অ্যালাউন্স বৃদ্ধি করবে, যা সুবিধাভোগীদের জন্য কিছুটা স্বস্তি আনবে।

২০২৩-২০৩০ সালের মধ্যে এই অ্যালাউন্স প্রতি সপ্তাহে ৯২ পাউন্ড থেকে ১০৬ পাউন্ডে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু সুবিধা কমিয়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর মাধ্যমে প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, অফিস ফর বাজেট রেসপনসিবিলিটি (ওবিআর) জানিয়েছে, তারা ২০২৩ সালের জন্য যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।

তবে, সরকারের পরিকল্পনা সংস্কারের কারণে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির উন্নতি হবে বলে তারা মনে করে। তাদের মতে, এই সংস্কারের ফলে আগামী দশকে অর্থনীতির আকার ০.৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, যা প্রায় ১৫.১ বিলিয়ন পাউন্ডের সমান।

যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির এই পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থির সময়ে বিভিন্ন দেশের নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশেরও উচিত, নিজেদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় দূরদর্শী পরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমের ওপর জোর দেওয়া।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *