রাচেল হোয়াইটরিডের শিল্পকর্ম, যা সাধারণত ধ্বংসাবশেষ ও শূন্যতার প্রতিচ্ছবি নিয়ে গঠিত, বর্তমানে ইংল্যান্ডের গুডউড আর্ট ফাউন্ডেশনে প্রদর্শিত হচ্ছে। শিল্পী তাঁর কাজে জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা, স্মৃতি এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে তুলে ধরেন। এই প্রদর্শনীতে কংক্রিটের তৈরি বিশাল আকারের স্থাপত্য, যা দর্শকদের মনকে নাড়া দেয়, বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
প্রদর্শনীতে “ডাউন অ্যান্ড আপ” শিরোনামের একটি কাজ রয়েছে, যা একটি পুরনো সিনাগগের সিঁড়ির কংক্রিট সংস্করণ। এই স্থাপনাটি দর্শকদের কাছে শহরের কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতির মাঝে এক ভিন্ন জগৎ তৈরি করে। এর পাশেই রয়েছে “আনটাইটেলড (পেয়ার)” নামে পরিচিত দুটি সাদা আয়তক্ষেত্রাকার কাঠামো, যা সমাধিস্থলের টেবিলের আদলে তৈরি করা হয়েছে। শিল্পীর এই ধরনের কাজগুলি জীবনের গভীরতা এবং মৃত্যুর অনিবার্যতা সম্পর্কে চিন্তা করতে উৎসাহিত করে।
হোয়াইটরিডের কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো স্মৃতিচিহ্ন তৈরি করা। তাঁর “হাউস” নামক বিখ্যাত কাজ, যা ১৯৯৩ সালে টার্নার পুরস্কার জিতেছিল, একসময় পূর্ব লন্ডনের আকাশে দৃশ্যমান ছিল। যদিও এটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল, কিন্তু শিল্পীর কাজ আজও মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। এই প্রদর্শনীতে শিল্পী তাঁর ক্যামেরার মাধ্যমে ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থানগুলির ছবি তুলে ধরেছেন। পরিত্যক্ত শেড, ভাঙা কারভান এবং প্রকৃতির মাঝে মিশে যাওয়া অন্যান্য বস্তুকে তিনি তাঁর ছবিতে ফুটিয়ে তুলেছেন, যা জীবনের বিচিত্র রূপকে তুলে ধরে।
হোয়াইটরিডের শিল্পকর্ম শুধুমাত্র সৌন্দর্যের প্রকাশ নয়, বরং এটি গভীর শোক ও উপলব্ধির জগৎ। ইতালির বারগামো শহরে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় শোক প্রকাশ করতে তিনি চেয়ারের তলার অংশের ছাঁচ ব্যবহার করে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেছিলেন। এই ধরনের কাজগুলি আমাদের জীবনের বেদনা এবং হারানোর অনুভূতিকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
প্রদর্শনীতে “ডপেলগ্যাঙ্গার” নামের একটি ভাস্কর্য রয়েছে, যা একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত কুঁড়েঘরের পুনর্গঠন। এর ভাঙা দেওয়াল এবং সাদা রঙের প্রলেপ, দর্শকদের একাকীত্ব এবং সময়ের পরিবর্তনের অনুভূতি এনে দেয়। এছাড়াও, “ডিটাচড ২” নামক কংক্রিটের তৈরি একটি আবদ্ধ শেড রয়েছে, যা দর্শকদের প্রকৃতির মাঝে একাকীত্বের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে তোলে।
রাচেল হোয়াইটরিডের শিল্পকর্ম আমাদের প্রকৃতির মাঝে জীবনের উত্থান-পতন এবং সময়ের বিরামহীন গতিকে অনুভব করতে শেখায়। তাঁর কাজগুলি, যা একাধারে শোক, স্মৃতি এবং প্রকৃতির অন্বেষণ, দর্শকদের জন্য এক নতুন উপলব্ধির দ্বার উন্মোচন করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান