রমজানের ভোরে: ঢাকের তালে জেগে ওঠা, ভালোবাসার গল্প!

রমজান মাস মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র। এই মাসে ভোরবেলা সেহরীর (Sehri) জন্য ঘুম থেকে ওঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।

সারা বিশ্বে, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে, এই সেহরীর সময় মানুষকে জাগানোর জন্য এক বিশেষ ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছেন ‘মুসাহারাতি’রা, যারা ভোর রাতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে মানুষকে সেহরীর জন্য ডাকেন।

মিশরের কায়রোর আরব ঘোনাইম-এর বাসিন্দা এসাম সাঈদ তেমনই একজন মুসাহারাতি। তিনি তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি ছোট ঢাক নিয়ে প্রতিদিন ভোর রাতে গাধার পিঠে চড়ে পুরো এলাকায় ঘুরে বেড়ান।

তিনি শুধু ঢাক বাজান না, বরং এলাকার শিশুদের নাম ধরে ধরে ডাকেন, “এই মায়ার ঘুম ভাঙলো? মেন্না, ওঠো!” তার এই ডাকে এলাকার ছেলে-বুড়ো সবার ঘুম ভাঙে এবং তারা সেহরীর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

লেবাননের সিডন শহরেও এই ঐতিহ্য এখনো বিদ্যমান। মাহমুদ ফানাস তার বাবার পুরনো সবুজ টুপি ও শাল পরে সেহরীর আগে পুরনো শহরের অলিগলিতে ঢোল বাজাতে বের হন।

তিনি আরবী ভাষায় ডাকেন, “ইয়া নাইম, ওয়াহহিদিল দায়িম”, অর্থাৎ “হে ঘুমন্ত ব্যক্তি, চিরঞ্জীবের উপাসনা করো!” ফানাস মনে করেন, প্রযুক্তির এই যুগেও এই ঐতিহ্য ধরে রাখা দরকার।

তার ইচ্ছা, তার সন্তানরাও যেন এই কাজটি করে।

ভারতে, পুরনো দিল্লির সংকীর্ণ গলিগুলোতে উমার ইরশাদ নামের ৫৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এখনো এই কাজটি করে যাচ্ছেন। তিনি তার বাবার কাছ থেকে এই দায়িত্ব পেয়েছেন।

ইরশাদ ভোরবেলা মানুষের দরজায় কড়া নাড়েন, দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করেন এবং এলাকার মানুষকে সেহরীর জন্য ডাকেন। ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানের কারণে এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে, তবুও ইরশাদ তার কাজটি চালিয়ে যেতে চান।

তিনি বলেন, “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এটা করি।”

তবে আধুনিক যুগে, মোবাইল ফোনের অ্যালার্মের কারণে মুসাহারাতিদের প্রয়োজনীয়তা কমে আসছে।

অনেক জায়গায় এই ঐতিহ্য বিলুপ্ত হতে চলেছে। কিন্তু এই সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে কিছু মানুষ এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা চান, তাদের পূর্বপুরুষদের এই সুন্দর ঐতিহ্য যেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টিকে থাকে।

আমাদের দেশেও, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, রমজান মাসে সেহরীর সময় মসজিদের মাইকে আজান দেওয়া হয়। অনেক সময় পাড়ার মুরুব্বিরা হেঁটে হেঁটে মুসল্লিদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন।

এই মুসাহারাতিদের মতো, তারাও চান সবাই যেন একসাথে সেহরী খেয়ে রোজা রাখতে পারে।

মুসাহারাতিরা শুধু একটি ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখেন না, বরং তারা রমজানের পবিত্রতা ও ভালোবাসার বার্তা পৌঁছে দেন সবার মাঝে।

তাদের এই ত্যাগ ও ভালোবাসাই রমজান মাসের আসল সৌন্দর্য।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *