বার্সেলোনার জার্সিতে রাফিনহার উত্থান: দল ছাড়ার শঙ্কা থেকে ব্যালন ডি’অর দৌড়ে
ফুটবল বিশ্বে সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে হলে, সবার প্রথমে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে হয়। ব্রাজিলের ফুটবলার রাফিনহার ক্ষেত্রেও যেন এমনটাই ঘটেছে। মাঠে গোল করার সুযোগ তৈরি হলেও, অনেক সময় তিনি তা কাজে লাগাতে পারেননি। প্রায়ই দেখা যেত, বাঁ পায়ের শক্তিশালী শটে বল ক্রসবারের অনেক উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে অথবা সামান্য জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছে। যারা খেলা নিয়মিত দেখেন, তাদের কাছে রাফিনহার এই ‘মিস’গুলো বেশ পরিচিত।
কিন্তু এই ‘মিস’ করার অভিজ্ঞতা থেকেই যেন নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেয়েছেন রাফিনহা। মূলত উইঙ্গার পজিশনে খেললেও, বিশ্বের সেরা গোল স্কোরারদের মতোই তিনি ব্যর্থতাকে দূরে ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতে শিখেছেন। বারবার চেষ্টা করে যাওয়ার মানসিকতাই তাকে আজকের অবস্থানে এনে দিয়েছে।
গত মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে খেলার সময় কিছুটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে রাফিনহাকে। মাঠের পারফরম্যান্স ভালো না হওয়ায়, দলবদলের একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। শোনা গিয়েছিল, সৌদি আরবের ক্লাব আল-হিলালে যোগ দিতে পারেন তিনি। যেখানে তার ব্রাজিল দলের সতীর্থ নেইমার, মালকম এবং রেনান লোদি’র সঙ্গে খেলার সুযোগ ছিল। অনেকের মনে হয়েছিল, রাফিনহার হয়তো বার্সেলোনায় টিকে থাকার মতো যোগ্যতা নেই। এমন পরিস্থিতিতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন এবং ফুটবল ছাড়ার কথাও ভেবেছিলেন, কারণ তার পরিবারকে ভালো একটা জীবন দেওয়ার মতো যথেষ্ট অর্থ ছিল।
তবে কঠিন সময়ে পাশে ছিলেন বার্সেলোনার নতুন কোচ, হান্সি ফ্লিক। ফ্লিক এসে রাফিনহাকে ডেকে পাঠান এবং তার সঙ্গে কথা বলেন। ফ্লিক জানতেন, রাফিনহার মধ্যে কী সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। তিনি খেলোয়াড়টির কঠোর পরিশ্রম, বল কন্ট্রোল এবং গোল করার মানসিকতাকে ভালোমতো কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। ফ্লিকের মতে, রাফিনহা ছিলেন এমন একজন খেলোয়াড়, যিনি দ্রুত গতিতে প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙতে পারতেন এবং উইং অথবা সেন্টার যে কোনো পজিশনে খেলতে পারতেন।
ফ্লিকের এই সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, তা প্রমাণ করেছেন রাফিনহা। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার অসাধারণ পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। পরিসংখ্যান বলছে, এই টুর্নামেন্টে তিনি বেশ কয়েকটি গোল করেছেন।
তবে, রাফিনহার এই সাফল্যের গল্পটা এত সহজে লেখা হয়নি। ক্যারিয়ারের শুরুতে তাকে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়েছে। ব্রাজিলে পেশাদার ফুটবল খেলার সুযোগ পাওয়ার আগে, বিভিন্ন সময়ে তার দল থেকে বাদ পড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাই হয়তো ব্যর্থতাকে মেনে নিয়েই তিনি বারবার ঘুরে দাঁড়াতে শিখেছেন।
বর্তমানে ব্যালন ডি’অরের দৌড়েও রয়েছেন রাফিনহা। যদিও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং আর্লিং হালান্ডের মতো তারকারা। তবে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনার ভালো ফল করলে, তার ব্যালন ডি’অর জেতার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে।
সব মিলিয়ে, রাফিনহার এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটা সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক। যারা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে চান, তাদের জন্য তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাফিনহার ভাষায় বলতে গেলে, এখন তার মন শুধু অর্থের দিকে নয়, বরং স্বপ্নের দিকে আকৃষ্ট।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান