বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে শুরু করে আধুনিক গাড়ির ইঞ্জিন – বিশ্বজুড়ে অত্যাবশ্যকীয় বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদনে ব্যবহৃত বিরল মৃত্তিকা ধাতু (Rare Earth Elements) নিয়ে এক নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। চীন এই ধাতুগুলোর প্রধান উৎপাদক এবং তাদের রপ্তানি নীতিতে পরিবর্তনের কারণে সরবরাহ শৃঙ্খলে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের বাজারেও, বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক্স ও গাড়ির দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে চীন ও আমেরিকার মধ্যে চলছে বাণিজ্য যুদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে বিরল মৃত্তিকা ধাতু নিয়ে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। চীন সরকার এপ্রিল মাস থেকে এই মূল্যবান ধাতুগুলির রপ্তানির উপর নতুন করে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু করেছে।
এর ফলে বিশ্বের অনেক দেশে, বিশেষ করে আমেরিকায়, এই ধাতুর সরবরাহ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এই বিরল ধাতুগুলো আসলে কি? এগুলো ১৭টি মৌলিক ধাতুর একটি গ্রুপ, যা আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরিহার্য। স্মার্টফোন, ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভি, গাড়ির ইঞ্জিন, এমনকি এমআরআই মেশিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরিতেও এর ব্যবহার রয়েছে।
ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধের মূল উপাদানও এই ধাতুগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ক্রিটিক্যাল মিনারেল সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক গ্রেসিলিন বাস্কারান-এর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর হাতে এখন এই ধাতুর মজুত আছে মাত্র দুই থেকে তিন মাসের মতো।
এরপর চীন ও আমেরিকার মধ্যে কোনো সমঝোতা না হলে, উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট শুধু উন্নত দেশগুলোর জন্য নয়, বরং এর প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে। সরবরাহ কমে গেলে ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট, গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
উদাহরণস্বরূপ, বাজারে স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের দাম বাড়তে পারে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এই সংকট নিরসনে আলোচনা চলছে। তবে, বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত না হলে এবং চীনের রপ্তানি নীতিতে পরিবর্তন না আসলে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
বিরল মৃত্তিকা ধাতুর বিকল্প খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে, কিন্তু সেগুলো এখনো পর্যন্ত এই ধাতুগুলোর মতো কার্যকরী নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা চীন নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকেও এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং নিজেদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
পাশাপাশি, বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য চুক্তি অপরিহার্য।
ভবিষ্যতে এই সংকট কিভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেদিকে এখন সবার নজর। যদি দ্রুত কোনো সমাধান না আসে, তবে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও বাড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: CNN