অর্থনীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব: সতর্ক করলেন বিলিয়নেয়ার বিনিয়োগকারী রে ডালিয়ো।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ হেজ ফান্ড ‘ব্রিজওয়াটার এসোসিয়েটস’-এর প্রতিষ্ঠাতা রে ডালিয়ো মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, তা থেকে আর রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্ব অর্থনীতি এখন ভাঙনের দিকে যাচ্ছে।
ডালিয়ো সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, ‘আমার বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে মনে হচ্ছে, আর্থিক ব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক— সবকিছুই খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।’
ডালিয়ো একজন অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী এবং ২০০৮ সালের আর্থিক সংকট সম্পর্কে তার ভবিষ্যদ্বাণী বেশ খ্যাতি এনেছিল। তিনি প্রায়ই ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেন। গত বছর তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ঋণ সংকট নিয়ে ২০২৩ সালের পূর্বাভাস দিতে তিনি ভুল করেছিলেন।
সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া দীর্ঘ পোস্টে ডালিয়ো আরও জানান, তিনি এমন অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করেন। তাদের মধ্যে রপ্তানিকারকদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। তারা সবাই এখন বুঝতে পারছেন যে, শুল্ক যাই হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর পরিকল্পনা করতে হবে।
ডালিয়ো মনে করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত ভোগের জন্য পণ্য তৈরি এবং ঋণের মাধ্যমে অর্থায়নের বর্তমান পরিস্থিতি টেকসই নয়।’
এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন দেশের সরকার ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে চাইছে। বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ইতোমধ্যে ডলার-ভিত্তিক সম্পদ এবং মার্কিন ট্রেজারি বন্ড থেকে দূরে সরে আসছেন।
বাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা এমন একটি ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন, যেখানে মার্কিন ডলার হয়তো আর বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে থাকবে না। ডালিয়ো তার নতুন বইয়ের প্রচারণার অংশ হিসেবে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা যদি ধরে নেন যে, তারা ডলারে ঋণ দিয়ে তা ফেরত পাবেন, তাহলে তারা ভুল করবেন।
ডালিয়োর মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে যাওয়ার মতো দেশগুলোর সংখ্যা বাড়ছে এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে শুরু করেছে।’
ডালিয়ো একা নন, আরো অনেক বিলিয়নেয়ার ট্রাম্পের নীতির কারণে উদ্বেগে রয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জেপি মর্গান চেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেমি ডিমন, ডুকেইন ফ্যামিলি অফিসের প্রতিষ্ঠাতা স্ট্যানলি ড্রুকেনমিলার, এবং হেজ ফান্ড বিনিয়োগকারী বিল অ্যাকম্যান। তাদের সবারই ধারণা, ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ মার্কিন অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
ডলারের অবমূল্যায়ন হলে, এর প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানি খরচ এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে। বর্তমানে ১ মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য প্রায় ১১৭ টাকার কাছাকাছি। বিশ্ব অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের দিকে আমাদের নজর রাখা দরকার।
তথ্য সূত্র: সিএনএন