যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ছেলের স্মৃতি নিয়ে লড়াই, বিমান নিরাপত্তা বাড়াতে তৎপর পরিবার
জানুয়ারী মাসের ২৯ তারিখটি যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির কাছে, পোটোম্যাক নদীর উপর একটি যাত্রীবাহী বিমান এবং একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২৮ বছর বয়সী পাইলট স্যাম লিলি সহ আরও অনেকে। স্যাম ছিলেন আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি আঞ্চলিক শাখার (পিএসএ এয়ারওয়েজ) ফ্লাইটে প্রথম কর্মকর্তা।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর স্যামের বাবা-মা, টিম ও শেরি লিলি তাঁদের ছেলেকে হারানোর শোককে জয় করে বিমানযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এক কঠিন লড়াই শুরু করেছেন। তাঁদের এই লড়াই শুধু তাঁদের ছেলের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোই নয়, বরং ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো পরিবারকে এই ধরনের ক্ষতির শিকার হতে না হয়, সেই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা।
দুর্ঘটনার পর থেকেই টিম ও শেরি তাঁদের ছেলের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং বিমান নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি)-এর তদন্তে সহযোগিতা করছেন এবং সেনাবাহিনীর কাছে জবাবদিহিতা চেয়েছেন। এনটিএসবি হলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি সরকারি সংস্থা, যা বিমান দুর্ঘটনা ও অন্যান্য পরিবহন দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে।
স্যামের বাবা, টিম লিলি নিজেও একজন পাইলট ছিলেন। তিনি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার চালক হিসেবে সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন। বিমান ও দুর্ঘটনার তদন্ত সম্পর্কে তাঁর ভালো ধারণা ছিল।
দুর্ঘটনার পর তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে যান এবং ছেলের দুর্ঘটনার কারণ জানার চেষ্টা করেন। তিনি জানান, দুর্ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর মনে হয়েছিল, কী ঘটেছিল এবং কোথায় ভুল ছিল।
এই শোকের সময়েও, টিম ও শেরি লিলি তাঁদের মনোবল হারাননি। তাঁরা তাঁদের শোককে শক্তিতে পরিণত করে বিমান নিরাপত্তা বিষয়ক আইন প্রণয়নে সহায়তা করছেন।
তাঁরা সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন এবং বিমান নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। তাঁদের এই প্রচেষ্টার ফলে হয়তো ভবিষ্যতে বিমান দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে।
দুর্ঘটনার পর তাঁরা তাদের ছেলের শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করেন। শোকের এই সময়ে, তাঁদের প্রতি সহানুভূতি জানাতে এগিয়ে এসেছিলেন অনেকে। তাঁদের বন্ধু-বান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁদের পাশে ছিলেন।
ছেলের মৃত্যুর পর টিম ও শেরি লিলি তাঁদের জীবনে গভীর পরিবর্তন অনুভব করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এই ঘটনার পর তাঁদের জীবন সম্পূর্ণ বদলে গেছে।
তাঁরা তাঁদের ছেলের স্মৃতি সবসময় হৃদয়ে ধারণ করেন এবং চান, তাঁর মতো আর কারো যেন এই পরিণতি না হয়। তাঁদের এই লড়াই নিঃসন্দেহে অন্যদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
বর্তমানে, এনটিএসবি এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত করছে। এই তদন্তে আরও ছয় মাস সময় লাগতে পারে। তবে, লিলি পরিবার তাঁদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
তাঁদের লক্ষ্য হলো, বিমানযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া এবং ভবিষ্যতে যাতে কোনো পরিবারকে এই ধরনের ক্ষতির শিকার হতে না হয়, সেই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন