যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যস্ততম বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচলে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ওয়াশিংটন ডিসির রোনাল্ড রেগান ন্যাশনাল বিমানবন্দরে (Reagan National Airport) প্রায়ই উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে অল্পের জন্য দুর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে।
সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Federal Aviation Administration – FAA) জানিয়েছে, তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।
জানুয়ারী মাসে এই বিমানবন্দরে একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল। একটি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের সঙ্গে একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ হয়, যাতে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ড (National Transportation Safety Board – NTSB) জানিয়েছে, ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিমানবন্দরটিতে ১৫,২১৪ টি ‘প্রায়-দুর্ঘটনা’র ঘটনা ঘটেছে, যেখানে উড়োজাহাজগুলো এক কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছিল এবং তাদের মধ্যে উল্লম্ব দূরত্ব ছিল মাত্র ১২২ মিটারের কম।
এছাড়া, ৮৫টি ক্ষেত্রে উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে দূরত্ব ছিল খুবই কম – মাত্র ৪৬০ মিটারের কম, এবং উল্লম্ব দূরত্ব ছিল ৬০ মিটারের কম।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অভিজ্ঞ পাইলট অ্যালেন ক্যাম্পবেল বলেন, কর্তৃপক্ষের আরও আগে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা উচিত ছিল।
তিনি জানান, আমেরিকার অন্যান্য বড় বিমানবন্দরে হেলিকপ্টার ও উড়োজাহাজের মধ্যে পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রাখা হয়, কিন্তু রেগান ন্যাশনাল বিমানবন্দরে তেমনটা দেখা যায় না।
বিমানবন্দরের আশেপাশে অনেক সরকারি ভবন থাকায় আকাশপথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যার কারণে উড়োজাহাজগুলোকে বিশেষ পথে চলাচল করতে হয়।
বিমানবন্দরের ব্যস্ততাও একটি উদ্বেগের কারণ। ২০১৮ সালে এখানে যাত্রী পরিবহন ছিল ২৫.৫ মিলিয়ন, যেখানে ডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী ছিল ২৫.১ মিলিয়ন।
বিমানবন্দরের প্রধান রানওয়েটি দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম রানওয়েগুলোর মধ্যে একটি, যেখানে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ বারের বেশি উড়োজাহাজ ওঠা-নামা করে।
এই ঘটনার পর FAA হেলিকপ্টার চলাচলের উপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট নয়।
ফেব্রুয়ারী মাসে, একটি আমেরিকান এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ অবতরণের সময় অন্য একটি উড়োজাহাজের কারণে জরুরি অবস্থা তৈরি হয়।
এছাড়া, মার্চ মাসের শুরুতে উড়োজাহাজ অবতরণের সময় কয়েকটি ‘ট্রাফিক কলিশন এভয়েডেন্স সিস্টেম’ (Traffic Collision Avoidance System – TCAS) সতর্ক সংকেত পাওয়া যায়, যা দুর্ঘটনার সম্ভবনা বাড়িয়ে তোলে।
FAA জানিয়েছে, এই সংকেতগুলো সম্ভবত ইউএস নেভি এবং সিক্রেট সার্ভিসের অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম পরীক্ষার কারণে হয়েছে।
গত সপ্তাহে, একটি ডেল্টা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ উড্ডয়নের সময় সামরিক প্রশিক্ষণের জেট বিমানের কারণে একই ধরনের সতর্ক সংকেত পাওয়া যায়।
এছাড়া, একটি ঘুড়ি এসে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজে আঘাত হানে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করা প্রয়োজন।
বিমানবন্দরের ট্র্যাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারে একজন কর্মীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছে, এবং FAA বিষয়টি তদন্ত করছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, আকাশপথে উড়োজাহাজের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সরকার কাজ করছে।
ভবিষ্যতে যাতে এমন কোনো দুর্ঘটনার শিকার হতে না হয়, সেজন্য আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন