আতঙ্কের বাস্তব রূপ! ‘দ্য লাস্ট অফ আস’-এর মতোই ভয়ঙ্কর ছত্রাকের জগৎ!

আশ্চর্য এক জগৎ: মাটির নিচে ছত্রাকের ‘সুপারহাইওয়ে’।

টিভি সিরিয়াল ‘দ্যা লাস্ট অফ আস’-এর কথা মনে আছে? যেখানে মানুষরূপী কিছু জীবজন্তু এক প্রকার ছত্রাকের আক্রমণে একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে ভয়ঙ্কর রূপ নেয়।

বাস্তবের পৃথিবীতেও এমন কিছু ছত্রাক রয়েছে, যাদের বিস্ময়কর ক্ষমতা দেখলে অবাক হতে হয়। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা মাটির নিচে থাকা ছত্রাকের এক জটিল জগৎ আবিষ্কার করেছেন, যা তাদের ‘সুপারহাইওয়ে’-এর মতো কাজ করে।

এই ছত্রাকগুলো মূলত ‘মাইকোরিজাল’ নামে পরিচিত।

এরা গাছের শিকড়ের সাথে এক ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করে। এই সম্পর্কের মাধ্যমে ছত্রাকগুলো গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে, যেমন ফসফরাস।

বিনিময়ে গাছ তাদের কার্বন সমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ করে। এই পারস্পরিক সহযোগিতার প্রক্রিয়া কয়েক কোটি বছর ধরে চলে আসছে এবং পৃথিবীর প্রায় ৭০ শতাংশ গাছেরাই এই ছত্রাকের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

বৈজ্ঞানিকরা জানিয়েছেন, ছত্রাকগুলো মাটির নিচে সুতার মতো জাল তৈরি করে, যা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

তারা এই জাল ব্যবহার করে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে এবং সরবরাহ করে। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ছত্রাকের এই জালগুলি এক ধরনের ‘সুপারহাইওয়ে’-এর মতো কাজ করে, যার মাধ্যমে পুষ্টি উপাদান দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছানো যায়।

এমনকি এই ‘সুপারহাইওয়ে’গুলিতে দুই দিকেই পুষ্টি উপাদানের চলাচল করতে পারে।

এই গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা বিশেষ ধরনের রোবট ব্যবহার করেছেন, যা ছত্রাকের ছবি তোলে এবং তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। এর মাধ্যমে তারা ছত্রাকের জাল বিস্তার এবং পুষ্টি উপাদানের আদান-প্রদান সরাসরি দেখতে পেয়েছেন।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ছত্রাকের জালগুলি ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন পথ তৈরি করে। এই পথগুলি একদিকে যেমন পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে, তেমনি অন্য দিকে নতুন গাছের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে।

এই আবিষ্কার ছত্রাকের জগৎ সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই নেটওয়ার্কগুলি পৃথিবীর কার্বন চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ছত্রাকগুলি গাছ থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৩ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে।

যদিও ‘দ্যা লাস্ট অফ আস’-এর মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বাস্তবে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তবে ছত্রাকের এই বিস্ময়কর জগৎ আমাদের প্রকৃতির জটিলতা এবং পারস্পরিক সম্পর্কের ধারণা দেয়।

বিজ্ঞানীরা এখন সারা বিশ্বের মাটি থেকে এই ছত্রাকের নেটওয়ার্কগুলি পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছেন, যাতে তারা বুঝতে পারেন এই প্রক্রিয়াগুলি কতটা বিস্তৃত এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব কেমন।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *