ক্যান্সারের ঝুঁকি! যেভাবে কমাবেন কোলোরেক্টাল ক্যান্সার?

কোলন ক্যানসার বা মলাশয়ের ক্যান্সার বর্তমানে একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ছে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে।

তবে আশার কথা হলো, সচেতনতা এবং কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

কোলন ক্যানসার কী?

কোলন ক্যানসার মূলত বৃহদান্ত্র বা কোলন এবং মলাশয়ের ক্যান্সারকে বোঝায়। এটি সাধারণত মলাশয়ের ভেতরের আবরণে (lining) শুরু হয়। যদি দ্রুত সনাক্ত করা না যায়, তবে এটি শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ঝুঁকির কারণগুলো:

কোলন ক্যানসারের ঝুঁকির কারণগুলোকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: জীবনযাত্রাগত কারণ এবং অনিয়ন্ত্রিত বা নিয়ন্ত্রণ-বহির্ভূত কারণ।

* জীবনযাত্রাগত কারণ: অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, ধূমপান, মদ্যপান, এবং অতিরিক্ত পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত মাংস ও ফাস্ট ফুড গ্রহণ করা এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও, শারীরিক কার্যকলাপের অভাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশের ভাজাপোড়া ও মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতাও এই ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

* নিয়ন্ত্রণ-বহির্ভূত কারণ: কিছু ক্ষেত্রে, বংশগত কারণেও এই রোগ হতে পারে। যেমন – যাদের পরিবারে এই রোগের ইতিহাস আছে, তাদের ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়া, যাদের ‘ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ’ (যেমন – ক্রোনস ডিজিজ বা আলসারেটিভ কোলাইটিস) আছে, তাদেরও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

লক্ষণগুলো:

কোলন ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে। তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হওয়া।
  • মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন。
  • পেটে ব্যথা বা ক্র্যাম্প হওয়া।
  • মলত্যাগের সময় রক্ত যাওয়া।
  • অকারণে ওজন কমে যাওয়া।
  • ক্লান্তি অনুভব করা।

চিকিৎসা পদ্ধতি:

কোলন ক্যানসারের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের স্তর এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর। সাধারণত, অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি এবং টার্গেটেড থেরাপি – এই চিকিৎসাগুলো ব্যবহার করা হয়। রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে, চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

কখন স্ক্রিনিং করাবেন?

কোলন ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য স্ক্রিনিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, যাদের বয়স ৪৫ বছর বা তার বেশি, তাদের স্ক্রিনিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যাদের ঝুঁকি বেশি, তাদের ক্ষেত্রে আগে থেকেই স্ক্রিনিং শুরু করা উচিত। স্ক্রিনিংয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা রয়েছে।

  • কলোনোস্কোপি: এই পদ্ধতিতে একটি সরু, নমনীয় নল ব্যবহার করে কোলন পরীক্ষা করা হয়।
  • সিগময়েডস্কোপি: এটি কলোনোস্কোপির চেয়ে কম সময়ের একটি পরীক্ষা, যেখানে কোলনের কিছু অংশ দেখা যায়।
  • স্টুল টেস্ট বা মলের পরীক্ষা: এই পরীক্ষার মাধ্যমে মলে লুকানো রক্ত বা ক্যান্সারের অন্য কোনো লক্ষণ আছে কিনা, তা দেখা হয়।
  • রক্ত পরীক্ষা: সম্প্রতি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেও কোলন ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

করণীয়:

কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে কিছু বিষয় মেনে চলা উচিত।

  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
  • ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা। খাবারের তালিকায় ফল, সবজি, শস্য এবং আঁশযুক্ত খাবার বেশি রাখা উচিত। ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার ত্যাগ করা উচিত।
  • পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া।
  • মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করা।

সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন:

কোলন ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। আপনার পরিবারের কারো মধ্যে যদি এই রোগের ইতিহাস থাকে, তবে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে আপনিও সুস্থ থাকতে পারেন।

তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা ও গবেষণা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *