ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে: বিশ্ব বাণিজ্যের পক্ষে লড়বেন রিভস

যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বৈঠকে বিশ্ব বাণিজ্য প্রসারের পক্ষে সওয়াল করতে যাচ্ছেন। বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য বাণিজ্য নীতির প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

খবরটি বাংলাদেশের জন্য সরাসরি তাৎপর্যপূর্ণ না হলেও, বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি কিভাবে আমাদের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে, সেই বিষয়ে ধারণা পেতে সহায়তা করবে।

**মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে যুক্তরাজ্যের অবস্থান**

যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র‍্যাচেল রিভস এই সপ্তাহে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিতব্য আইএমএফের বৈঠকে যোগ দেবেন। এই বৈঠকে তিনি মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরবেন।

বিশেষ করে, ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে তিনি সরব হবেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বর্তমানে বাণিজ্যের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল।

দেশটির মোট রপ্তানির পরিমাণ তাদের জিডিপির ৬০ শতাংশের সমান। এমন পরিস্থিতিতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি যুক্তরাজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাজ্যের গাড়ি ও ইস্পাত রপ্তানির ওপর থেকে শুল্ক কমাতে রাজি হবে। তারা একটি বৃহত্তর বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা জোরদার করতেও আগ্রহী।

তবে, কোনো মূল্যে এই ধরনের চুক্তি করার ব্যাপারে রাজি নয় যুক্তরাজ্য।

**বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট**

আইএমএফের বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা ধরনের উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে এই পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ।

ট্রাম্পের সম্ভাব্য বাণিজ্য বাধাগুলি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), চীন এবং আমেরিকার মতো বড় অর্থনীতির দেশগুলির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, আইএমএফ তাদের সর্বশেষ পূর্বাভাসে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিতে পারে। একইসঙ্গে, আর্থিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধির বিষয়েও তারা সতর্কবার্তা দিতে পারে।

**যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ও বাণিজ্য আলোচনা**

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমানো নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের সঙ্গে ট্রাম্পের মতবিরোধ চলছে। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা উদ্বিগ্ন।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা অবশ্য ট্রাম্পকে তাদের জন্য ১০ শতাংশ শুল্ক ছাড় দিতে রাজি করাতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান। তবে কিছু পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক হ্রাসের বিষয়ে তারা আলোচনা করতে চাইছে।

যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বাণিজ্য চুক্তি করা অত্যন্ত জরুরি। যুক্তরাজ্যের বাজেট অফিসের মতে, একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধ হলে ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে তাদের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এর ১ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে।

**বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য প্রভাব**

বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য কিছু প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্ব বাণিজ্য চুক্তি এবং শুল্কের পরিবর্তন আমাদের রপ্তানি বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে।

বিশেষ করে, তৈরি পোশাক শিল্পের (আরএমজি) মতো রপ্তানিনির্ভর শিল্পগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে বিদেশি বিনিয়োগও কমতে পারে।

অতএব, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ এবং বিশ্ব অর্থনীতির হালচাল বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে সওয়াল করা এবং বাণিজ্য চুক্তিগুলি নিশ্চিত করার চেষ্টা আমাদের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *