**নবায়নযোগ্য জ্বালানির দৌড়ে চীন: বিশ্বজুড়ে বাড়ছে সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন, বাংলাদেশের জন্য সুযোগ কতটুকু?**
বিশ্বজুড়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের চাহিদার ৯২.৫ শতাংশ এসেছে বায়ু, সৌর ও অন্যান্য সবুজ উৎস থেকে।
এই পরিবর্তনের পেছনে চীনের অবদান সবচেয়ে বেশি। আন্তর্জাতিক পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সংস্থা (IRENA)-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে উৎপাদিত নতুন বিদ্যুতের প্রায় ৬৪ শতাংশ এসেছে চীন থেকে।
গত বছর বিশ্বে নতুন করে প্রায় ৫৮৫ বিলিয়ন ওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ যুক্ত হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১৫.১ শতাংশ বেশি।
বর্তমানে বিশ্বের মোট বিদ্যুতের ৪৬ শতাংশ আসে সৌর, বায়ু এবং অন্যান্য পরিবেশ-বান্ধব উৎস থেকে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি জীবাশ্ম জ্বালানির যুগকে বিদায় জানাচ্ছে। রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন কর্মসংস্থান তৈরি করছে, বিদ্যুতের বিল কমাচ্ছে এবং আমাদের বাতাসকে আরও পরিষ্কার করছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই পরিবর্তনকে আরও দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গত করতে হবে।
চীনের এই সৌরবিদ্যুৎ বিপ্লব রীতিমতো চোখে পড়ার মতো। শুধু ২০২৪ সালেই দেশটি প্রায় ৩৭৪ বিলিয়ন ওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।
এর মধ্যে সিংহভাগই এসেছে সৌর প্যানেল থেকে। এই পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনের আট গুণেরও বেশি এবং ইউরোপের সম্মিলিত উৎপাদনের পাঁচ গুণের সমান।
বর্তমানে চীনের সৌর প্যানেল বিদ্যুতের পরিমাণ প্রায় ৮৮৭ বিলিয়ন ওয়াট। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এই পরিমাণ ১৭৬ বিলিয়ন ওয়াট।
তবে, আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার তিনগুণে উন্নীত করার কথা রয়েছে। কিন্তু এই হারে চললে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না।
সেক্ষেত্রে এখনো ২৮ শতাংশ ঘাটতি থেকে যাবে।
এই পরিস্থিতিতে, জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক প্রধান সাইমন স্টিয়েল ইউরোপসহ অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশগুলোকে চীনের এই সাফল্যের সাথে তাল মেলাতে আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “যেহেতু কোনো কোনো সরকার জলবায়ু নেতৃত্ব থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে, তাই অন্যদের এগিয়ে আসার এবং সুবিশাল সুযোগগুলো কাজে লাগানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।”
নবায়নযোগ্য জ্বালানির এই উত্থান বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ছে, বিশেষ করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ঘন ঘন বন্যার কারণে ঝুঁকি বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। সরকারও নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে এবং সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার জনপ্রিয় করার চেষ্টা চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন ব্যক্তি ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে বিনিয়োগ বাড়ানো, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং নীতিগত সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশও এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের অংশীদার হতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস