ধনী ট্যাক্স? নাকি খরচ কম? ট্রাম্প যুগে রিপাবলিকানদের অর্থনৈতিক লড়াই!

যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান পার্টির অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে চলছে গভীর বিতর্ক। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দেশটির অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা নিয়ে দলটির মধ্যে বিভেদ দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, ট্রাম্পের সঙ্গে যুক্ত একটি নতুন ‘জনতাবাদী’ ধারা, যারা শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থের কথা ভাবে। এই দুই পক্ষের মধ্যে নীতি নির্ধারণ নিয়ে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

আলোচনার মূল বিষয়গুলো হলো কর, সরকারি ব্যয় এবং জাতীয় ঋণ। ট্রাম্প চাচ্ছেন, ধনী ব্যক্তিদের ওপর করের হার বাড়ানো হোক।

তবে দলের অনেকে এতে রাজি নন। তারা চান, ট্রাম্পের আমলে নেওয়া কর ছাড়গুলো বহাল থাকুক। স্বাস্থ্যখাতে ওবামার আমলে হওয়া পরিবর্তনগুলো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলো অব্যাহত রাখা হবে কিনা, তা নিয়েও দ্বিধা রয়েছে।

সেই সাথে, বাড়ছে দেশটির প্রায় ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণের বোঝা, যা কিভাবে সামাল দেওয়া হবে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

রিপাবলিকানদের মধ্যে পুরাতনপন্থী এবং নতুন জনতাবাদী—উভয় ধারারই প্রভাবশালী নেতা রয়েছেন। নিউট গিংরিচ ও গ্রোভার নরকুইস্টের মতো নেতারা দীর্ঘদিন ধরে কম করের পক্ষে ও সরকারি ব্যয় কমানোর পক্ষে কথা বলছেন।

অন্যদিকে, স্টিভ ব্যাননের মতো নেতারা ঐতিহ্যবাহী অর্থনৈতিক নীতির বিরোধিতা করে শ্রমিক শ্রেণির জন্য নতুন নীতি গ্রহণের প্রস্তাব করছেন।

ক্যাপিটল হিলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও, রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভেদ প্রকট। দলের নেতারা চান, মেমোরিয়াল ডে’র মধ্যে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো হোক।

দলের মধ্যেকার এই সংকট নিরসনে বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। একটি প্রস্তাব হলো, ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের কর ছাড় এবং ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সরকারি ব্যয় কমানো।

টেক্সাসের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান আগস্ট ফ্লুজার বলেছেন, এই বিল বাজারের স্থিতিশীলতা আনবে এবং দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।

তবে সবচেয়ে কঠিন বিষয় হলো কর নীতি, স্বাস্থ্যখাত এবং পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। স্বাস্থ্যখাতে ভর্তুকি বিষয়ক প্রোগ্রাম ‘মেডিক্যাড’-এর কাটছাঁট নিয়ে অনেক মডারেট রিপাবলিকান আপত্তি জানিয়েছেন।

কারণ, এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রায় ৭ কোটির বেশি আমেরিকান স্বাস্থ্যসেবা পান। আবার, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপগুলোর ওপরও অনেকে কর ছাড় অব্যাহত রাখতে চাইছেন।

অন্যদিকে, রক্ষণশীল রিপাবলিকানরা ব্যয় সংকোচনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। তারা মনে করেন, কর ছাড়ের কারণে বার্ষিক ঘাটতি বাড়ছে, যা দেশের ঋণের বোঝা বাড়াচ্ছে।

অন্যদিকে, হাউস স্পিকার মাইক জনসন নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি ও ক্যালিফোর্নিয়ার কয়েকজন রিপাবলিকান প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করছেন, যারা স্টেট ও লোকাল ট্যাক্স ডিডাকশন (এসএএলটি) বহাল রাখার পক্ষে।

ট্রাম্পও এই বিতর্কে জড়িয়েছেন। তিনি অবশ্য বলেছেন, ধনী ব্যক্তিদের জন্য করের হার বাড়ানো যেতে পারে, তবে এই বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে।

ডেমোক্র্যাটরা মনে করেন, এই কর প্রস্তাব ধনী ব্যক্তিদের সুবিধা দেবে এবং সাধারণ মানুষের ক্ষতি করবে। টেক্সাসের রিপাবলিকান প্রতিনিধি চিপ রয় তাঁর সহকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনের কথা না ভেবে দলের নীতি অনুযায়ী কাজ করার জন্য।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *