ট্রাম্পের নতুন চমক: রিপাবলিকানদের প্রগতিশীল রূপ!

যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকানদের নীতিতে প্রগতিশীলতার ছোঁয়া: পরিবর্তনের ইঙ্গিত?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক দৃশ্যপট প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। দেশটির রিপাবলিকান পার্টি, একসময় যাদের রক্ষণশীল নীতি বিশেষভাবে পরিচিত ছিল, তারা এখন বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক ইস্যুতে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে।

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের “পপুলিজম” ধারণার প্রভাবে, রিপাবলিকানদের কিছু নীতি ডেমোক্রেটদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছে। সম্প্রতি এমন কিছু পরিবর্তনের দিকে নজর রাখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

উদাহরণস্বরূপ, নবজাতকদের জন্য সরকারি সহায়তা প্রদানের একটি প্রস্তাবনা এসেছে। রিপাবলিকানদের ট্যাক্স বিষয়ক পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রত্যেক আমেরিকান নবজাতককে ১০০০ ডলার দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা তারা তাদের শিক্ষা অথবা বাড়ির জন্য ব্যবহার করতে পারবে।

এটিকে “ম্যাগা” সেভিংস অ্যাকাউন্ট হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। এই ধারণাটি নতুন নয়, কারণ ডেমোক্রেট সিনেটর কোরি বুকারও শিশুদের জন্য “বেবি বন্ড”-এর প্রস্তাব করেছিলেন, যা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ধনী ব্যক্তিদের উপর কর আরোপের সম্ভাবনা। ট্রাম্প নিজেও ধনী করদাতাদের উপর কর বাড়ানোর বিষয়ে তার সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।

যদিও পরে তিনি এই বিষয়ে তার অবস্থান পরিবর্তন করেন, তবে পুরনো রিপাবলিকানদের মধ্যে এটি কিছুটা অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে, কারণ তারা আগে নতুন কর আরোপের বিরোধী ছিলেন।

ওষুধের দাম কমানোর বিষয়েও রিপাবলিকানদের মধ্যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন প্রেসক্রিপশন ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন।

যদিও এই পদক্ষেপ আদালতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে, তবে এটি ডেমোক্র্যাটদের সাফল্যের কাছাকাছি, যারা মেডিকেয়ারের মাধ্যমে কিছু ওষুধের দাম কমানোর আইন পাস করেছে।

শিশুদের জন্য কর ছাড়ের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়েও রিপাবলিকানরা চিন্তাভাবনা করছেন। প্রতিনিধি পরিষদে, তারা শিশু কর ক্রেডিট ৫০০ ডলার বাড়িয়ে ২,৫০০ ডলার করার পরিকল্পনা করছেন।

যদিও এটি ডেমোক্রেটদের দেওয়া সুবিধার চেয়ে কম, তবুও শিশুদের প্রতিপালনের খরচকে স্বীকৃতি দেয়। তবে, এই পরিকল্পনায় কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে।

অভিবাসী, যারা কর পরিশোধ করেন এবং যাদের সন্তান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, তারাও এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।

এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রিপাবলিকান পার্টি এখন তাদের সমর্থনের ক্ষেত্র প্রসারিত করতে চাইছে। শ্রমিক শ্রেণি এবং সাধারণ মানুষের সমর্থন লাভের জন্য তারা এমন কিছু নীতি গ্রহণ করতে চাইছে যা আগে ডেমোক্রেটদের এজেন্ডা হিসেবে পরিচিত ছিল।

তবে, এই পরিবর্তন সত্ত্বেও, রাজনৈতিক বিভাজন এখনো গভীর রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যখাত এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক নীতিগুলোতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে এখনো মতপার্থক্য রয়েছে।

উভয় দলই তাদের নিজ নিজ এজেন্ডা বাস্তবায়নে অনড় অবস্থানে রয়েছে, ফলে কোনো বড় ধরনের সমঝোতার সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে উভয় দলের মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যেতে পারে। অবকাঠামো নির্মাণ, অবসর গ্রহণ বিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচি এবং মাদকাসক্তি নিরাময়ের মতো বিষয়গুলোতে উভয় দল একসঙ্গে কাজ করতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিভিন্ন ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা হলেও, দলগুলোর মধ্যে বিভেদ এখনো অনেক গভীর। যদিও রিপাবলিকানদের মধ্যে প্রগতিশীল নীতির প্রতি সমর্থন বাড়ছে, তবে এর বাস্তব রূপ দেওয়া এখনো কঠিন।

তথ্যসূত্র: সিএনএন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *