খাবারের মেনুতে নতুন পরিবর্তন: ছোট আকারের পরিবেশনা।
বিশ্বজুড়ে খাদ্য বাজারের চিত্র ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে, যেখানে রেস্টুরেন্টগুলো তাদের গ্রাহকদের জন্য নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি, বিভিন্ন খাদ্য সরবরাহকারী সংস্থা, যেমন – অলিভ গার্ডেন, চিজকেক ফ্যাক্টরি এবং পি.এফ. চাং-এর মতো জনপ্রিয় রেস্তোরাঁগুলো তাদের মেনুতে ছোট আকারের খাবার পরিবেশন শুরু করেছে।
এর প্রধান কারণ হলো গ্রাহকদের রুচি ও চাহিদার পরিবর্তন এবং সেই সঙ্গে বাজারের অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা।
এই পরিবর্তনের মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো – অর্থনৈতিক চাপ। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় অনেকেই এখন সাশ্রয়ী মূল্যের খাবারের দিকে ঝুঁকছেন।
সেই কারণে রেস্তোরাঁগুলো ছোট আকারের খাবার পরিবেশন করে দাম কমিয়ে দিচ্ছে, যা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে সহায়ক হচ্ছে। অলিভ গার্ডেন-এর পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই ধরনের মেনু চালু করার ফলে তাদের ‘খরচ সামর্থ্যের সূচক’ ১৫% বেড়েছে।
এছাড়াও, মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন এসেছে। এখনকার দিনে অনেকেই একসঙ্গে অনেক খাবার খাওয়ার পরিবর্তে অল্প পরিমাণে, কিন্তু ঘন ঘন খেতে পছন্দ করেন।
ন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর সমীক্ষা বলছে, প্রায় ৬৪% গ্রাহক এখন দিনের বেলায় তিনটি মূল খাবারের পরিবর্তে স্ন্যাকস বা হালকা খাবার খেতে পছন্দ করেন। এমনকি, প্রায় ৭৪% গ্রাহক ছোট আকারের খাবার পরিবেশনের দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
ছোট আকারের খাবার পরিবেশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো – খাদ্য অপচয় কমানো। বড় আকারের খাবার পরিবেশন করলে অনেক সময় খাবার নষ্ট হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
ছোট আকারের পরিবেশনা এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে।
এই পরিবর্তনের ফলে রেস্তোরাঁগুলো ফাস্ট ফুড চেইনগুলোর সঙ্গে আরও ভালোভাবে প্রতিযোগিতা করতে পারবে। বর্তমানে ফাস্ট ফুড চেইনগুলো বিভিন্ন অফার ও ভ্যালু মিলের মাধ্যমে গ্রাহকদের আকর্ষণ করছে।
ক্যাজুয়াল ডাইনিং রেস্তোরাঁগুলোও যদি সাশ্রয়ী মূল্যের বিকল্প নিয়ে আসে, তাহলে তারা এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে।
উদাহরণস্বরূপ, চিজকেক ফ্যাক্টরি ২০১১ সাল থেকেই তাদের মেনুতে ছোট আকারের, কম ক্যালোরির খাবার পরিবেশন করে আসছে। সম্প্রতি তারা “বাইট” নামে একটি নতুন বিভাগ চালু করেছে, যেখানে ১০ ডলারের নিচে ছোট আকারের খাবার পাওয়া যাচ্ছে।
পি.এফ. চাং-ও তাদের মেনুতে “ঐতিহ্যবাহী” এবং “মাঝারি” – এই দুটি আকারে খাবার পরিবেশন শুরু করেছে, যেখানে মাঝারি আকারের খাবারটি ছোট এবং দামেও সস্তা।
এই পরিবর্তনের ফলে রেস্তোরাঁগুলো গ্রাহকদের আরও বেশি পছন্দসই বিকল্প দিতে পারবে। পি.এফ. চাং-এর বিপণন প্রধান সোনিকা প্যাটেল-এর মতে, গ্রাহকরা এখন এমন বিকল্প খুঁজছেন যা তাদের পকেট এবং রুচির সঙ্গে মানানসই।
তবে, এই পরিবর্তনের পেছনে ওজন কমানোর ওষুধ সেবনের মতো বিষয়গুলোও আলোচনায় আসছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ওষুধের প্রভাব এখনো খাদ্য বাজারের ওপর সেভাবে পড়েনি।
বর্তমানে, খাদ্য সরবরাহকারীরা তাদের মেনুতে পরিবর্তন আনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, যা গ্রাহকদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
মেনুগুলোতে পরিবর্তন আনা রেস্তোরাঁগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, তবে খাদ্য বাজারের এই নতুন প্রবণতা ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন