রিভলমিড: ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ের ‘মূল্য’

ক্যান্সারের ওষুধ: আরোগ্য লাভের পথে এক নির্মম মূল্যের গল্প। বছর কয়েক আগেও, ক্যান্সারের নাম শুনলে যেন বুকটা কেঁপে উঠত।

জীবন বাঁচানোর লড়াইয়ে ওষুধের খরচ এতটাই বেশি যে অনেক সময় তা অসহায় করে তোলে রোগীদের। সম্প্রতি, একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই এক মর্মস্পর্শী চিত্র, যেখানে জীবনদায়ী ওষুধের আকাশছোঁয়া দাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া এই প্রতিবেদন মূলত একটি বিশেষ ক্যান্সার-বিরোধী ওষুধের (Revlimid) উচ্চ মূল্যের ওপর আলোকপাত করেছে। রেভলিমাইড, যা ‘লেনালিডোমাইড’ নামেও পরিচিত, একটি ওষুধ যা মাল্টিপল মায়োমা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

মাল্টিপল মায়োমা হলো রক্তের ক্যান্সার যা হাড়ের মধ্যে বাসা বাঁধে। এই ওষুধটি থ্যালিডোমাইড নামক একটি পুরনো ওষুধের উন্নত সংস্করণ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ওষুধের একটি পিলের দাম প্রায় ১০০০ মার্কিন ডলার! যেখানে এর উৎপাদন খরচ মাত্র ২৫ সেন্ট।

অর্থাৎ, বাংলাদেশি টাকায় হিসাব করলে একটি পিলের দাম প্রায় ৮৩ হাজার টাকার কাছাকাছি! যেখানে উৎপাদন খরচ মাত্র ২১ টাকা।

এই আকাশছোঁয়া দামের কারণে অনেক রোগী এই ওষুধ কিনতে পারেন না, অথবা ধার-দেনা করে হলেও চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

এর ফলস্বরূপ, স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়ামও ক্রমাগত বাড়তে থাকে।

এই গল্পের শুরুটা হয় কয়েক দশক আগে, যখন থ্যালিডোমাইড নামক ওষুধটি গর্ভবতী মহিলাদের সকালে বমি বন্ধ করতে এবং ঘুমের জন্য ব্যবহার করা হতো।

কিন্তু পরে জানা যায়, এটি জন্মগত ত্রুটি সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে, বিজ্ঞানীরা এই ওষুধের রাসায়নিক গঠনে সামান্য পরিবর্তন এনে রেভলিমাইড তৈরি করেন।

রেভলিমাইডের আবিষ্কারের পেছনে ছিলেন বেথ ওলমার নামের এক নারী।

তাঁর স্বামী ইরা মাল্টিপল মায়োমা রোগে আক্রান্ত হলে, তিনি এই রোগের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন গবেষণা করতে শুরু করেন। অবশেষে, তিনি জানতে পারেন থ্যালিডোমাইডের নতুন ব্যবহারের সম্ভাবনা সম্পর্কে।

যদিও ইরাকে বাঁচানো যায়নি, তবে তাঁর চেষ্টা রেভলিমাইডের আবিষ্কারের পথ খুলে দেয়।

কিন্তু রেভলিমাইডের উচ্চমূল্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা সেলেনেজ (বর্তমানে ব্রিস্টল মায়ার্স স্কুইব) এই দাম নির্ধারণ করে।

তারা ওষুধের পেটেন্ট, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন এবং রোগীর সহায়তার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করে। তবে সমালোচকদের মতে, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ওষুধের দাম ইচ্ছামতো বাড়ানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, কীভাবে সেলেনেজ ওষুধটির একচেটিয়া অধিকার ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে।

এর মধ্যে ছিল, জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারকদের বাজারে প্রবেশে বাধা দেওয়া, ডাক্তার ও রোগী সংগঠনগুলোকে আর্থিক সহায়তা করা ইত্যাদি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জীবনদায়ী ওষুধের উচ্চমূল্য একটি বড় সমস্যা। বাংলাদেশেও ক্যান্সারের চিকিৎসার খরচ অনেক বেশি।

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে ওষুধের দাম কমানো এবং সবার জন্য চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শুধু ওষুধই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন একটি সুস্থ ও মানবিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।

যেখানে মুনাফার বদলে মানুষের জীবনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *