যুক্তরাষ্ট্রে একটি জাতীয় অটিজম ডেটাবেজ তৈরির পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন অটিজম বিষয়ক গবেষক ও অধিকারকর্মীরা। তাঁদের আশঙ্কা, এই ডেটাবেজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে এবং অটিজম সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে।
এছাড়াও, এর মাধ্যমে একটি বিতর্কিত ধারণাকে উৎসাহিত করা হতে পারে, যা ইতিহাসে ‘ইউজেনিক্স’ নামে পরিচিত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (HHS) যদিও বলছে, তারা কোনো ‘রেজিস্ট্রি’ তৈরি করছে না, তবে তারা স্বীকার করেছে যে একটি বৃহৎ ডেটাবেজ তৈরি করা হবে, যা অটিজম নিয়ে প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলারের একটি গবেষণা প্রকল্পের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র সম্প্রতি জানিয়েছেন, তিনি এই গবেষণার ফলাফল কয়েক মাসের মধ্যেই ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছেন।
এই ডেটাবেজের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে হাজার হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেছেন। একজন সাধারণ নাগরিক, যিনি আগে কোনো প্রতিবাদে যুক্ত ছিলেন না, তাঁর দুই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানের কথা ভেবে এই পিটিশন তৈরি করেছেন।
তিনি বলেন, “আমি আমার সন্তানদের জন্য কথা বলতে চাই, যারা নিজেদের কথা বলতে পারে না।”
যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, তারা ‘অটিজম রেজিস্ট্রি’ তৈরি করছে না, তবে তারা এটিকে একটি ‘বাস্তব-বিশ্ব ডেটা প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে বর্ণনা করছে, যা অটিজমের কারণ ও চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণার জন্য বিদ্যমান ডেটা সেটগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে।
সমালোচকদের মতে, নামের পরিবর্তন হলেও মূল বিষয়টি একই থাকছে।
এই ডেটাবেজ তৈরিতে ব্যক্তির তথ্য কিভাবে সুরক্ষিত রাখা হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এছাড়া, ডেটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ব্যক্তিরা তাঁদের তথ্য সরিয়ে নিতে পারবেন কিনা, সে বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই তাঁদের অধিকার খর্ব হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত মানুষের উপর গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যা এই ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। তবে, প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।
এমনকি, দ্রুত ফলাফল প্রকাশের যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি নিয়েও অনেকে সন্দিহান। তাঁদের মতে, এত অল্প সময়ে বিভিন্ন ডেটা একত্রিত করে একটি নির্ভরযোগ্য ফলাফল পাওয়া কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (NIH) এই ডেটা সংগ্রহের জন্য অন্যান্য সরকারি সংস্থা, যেমন সেন্টারস ফর মেডিকেয়ার অ্যান্ড মেডিকেইড সার্ভিসেস, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন, প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং ভেটেরান্স অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে অংশীদারিত্বের কথা ভাবছে।
এমনকি, ফার্মেসি চেইন, স্বাস্থ্য সংস্থা, বীমা এবং স্মার্ট ঘড়ির মতো ডিভাইস থেকেও ডেটা সংগ্রহ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা গোপনীয়তা লঙ্ঘনের কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি রাজ্যে (ডেলাওয়্যার, ইন্ডিয়ানা, নর্থ ডাকোটা, নিউ জার্সি, রোড আইল্যান্ড, উটাহ এবং ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া) অটিজম বিষয়ক ডেটাবেজ রয়েছে। কিছু শহরেও এই ধরনের তালিকা দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং ব্যক্তির অধিকার রক্ষা করা জরুরি। তাঁরা চান, ডেটাবেজ তৈরির পরিবর্তে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং তাঁদের অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হোক।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান