যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভ্যাকসিন বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা ড. পিটার মার্কস, যিনি সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন, বিশিষ্ট আইনজীবী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের (আরএফকে জুনিয়র) অটিজম বিষয়ক কিছু মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
তাঁর মতে, কেনেডি জুনিয়র, জনসাধারণের মধ্যে, বিশেষ করে অটিজম নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবারগুলোর মধ্যে, ‘মিথ্যা আশা’ তৈরি করছেন।
ড. মার্কসের মতে, অটিজমের কারণ সেপ্টেম্বরের মধ্যে খুঁজে বের করার যে ঘোষণা কেনেডি দিয়েছেন, তা বাস্তবসম্মত নয়।
সিবিএস নিউজের ‘ফেইস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. মার্কস বলেন, অটিজম একটি জটিল বিষয় এবং এত দ্রুত এর কারণ খুঁজে বের করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, “কাউকে মিথ্যা আশা দেওয়া উচিত না।”
ড. মার্কসের এই মন্তব্যের কারণ হলো, কেনেডি সম্প্রতি ঘোষণা করেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথের (এনআইএইচ) মাধ্যমে অটিজম নিয়ে একটি বৃহৎ গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছে।
কেনেডি’র ভাষ্যমতে, “সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা জানতে পারব কিসের কারণে অটিজম বাড়ছে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।”
ডা. মার্কস উল্লেখ করেন যে, আগেকার গবেষণায় অটিজমকে জিনগত এবং পরিবেশগত কারণগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত হিসেবে দেখানো হয়েছে।
তাঁর মতে, বর্তমানে অটিজমের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ মূলত রোগ নির্ণয়ের উন্নতি, রোগের বিস্তার নয়।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি সহানুভূতিশীল একটি সংবাদমাধ্যম, ফক্স নিউজে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেনেডি দাবি করেন যে, “পরিবেশগত বিষাক্ততা”-র কারণে অটিজমের বিস্তার ঘটছে।
তিনি ভ্যাকসিনকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
যদিও একাধিক গবেষণায় এই দাবির বিরোধিতা করা হয়েছে।
ড. মার্কস, কেনেডি’র এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, “আমরা শিশুদের মধ্যে যে ভ্যাকসিনগুলো ব্যবহার করি, তার কারণে অটিজম হয়, এমনটা আমি মানতে রাজি নই।
কারণ, আমরা বহু কোটি শিশুর ওপর এর পরীক্ষা চালিয়েছি।”
ড. মার্কস ২০১৬ সাল থেকে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর (এফডিএ) ভ্যাকসিন বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সম্প্রতি তাঁর পদত্যাগের কারণ হিসেবে জানা যায়, তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের ভ্যাকসিন বিরোধী প্রচারণার সঙ্গে একমত হতে পারেননি।
তাঁর পদত্যাগপত্রে কেনেডির কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, কেনেডি দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
মার্কসের মতে, সত্য ও স্বচ্ছতার পরিবর্তে কেনেডি, তাঁর ভুল তথ্য এবং মিথ্যাকে সমর্থন করার জন্য অন্যদের বাধ্য করতে চেয়েছেন।
মার্কসের পদত্যাগের কয়েক দিন আগে, টেক্সাসের একটি গ্রামে হামে আক্রান্ত হয়ে আট বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়।
এর কয়েক সপ্তাহ আগে, একই এলাকার ছয় বছর বয়সী একটি শিশুরও হামে মৃত্যু হয়েছিল।
এদের কেউই হামের ভ্যাকসিন নেয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে হামে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হলো।
এদিকে, কেনেডি জুনিয়র, হামের অত্যন্ত কার্যকর ও নিরাপদ ভ্যাকসিনটির বিষয়ে প্রকাশ্যে সমর্থন দেননি।
এমনকি তিনি ওই শিশুদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে সেমিনোলেও গিয়েছিলেন।
তিনি সম্প্রতি সিবিএসকে বলেন, “মানুষের হামের ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত”, তবে সরকারের এই বিষয়ে বাধ্য করা উচিত নয়।
এই বিতর্কের মধ্যে কেনেডি, ভিটামিন ও কড লিভার অয়েলের মতো বিকল্প চিকিৎসার ওপর জোর দেওয়া কিছু ব্যক্তির প্রতি সমর্থন জুগিয়েছেন, যারা হামের ভ্যাকসিন এড়িয়ে চলেন।
ড. মার্কস, সেমিনোলের শিশুদের হামে মৃত্যুর জন্য কেনেডি ও তাঁর কর্মীদের দায়ী করেছেন।
তাঁর মতে, “এটা সম্পূর্ণভাবে একটি অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু।
এই শিশুদের ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত ছিল, এভাবেই হামে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যু রোধ করা যেতে পারে।”
অন্যদিকে, কেনেডি সম্প্রতি এফডিএ-এর সদর দফতরে গিয়ে সেখানকার কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন “গভীর রাষ্ট্রের” অংশ হওয়া থেকে বিরত থাকেন।
উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ৩,৫০০ এফডিএ কর্মীর পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান